পোশাক শিল্প মালিকরা মানবিক আচরণ করুন
সম্পাদকীয়
🕐 ৮:২১ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০
ছাঁটাই বন্ধ ও বকেয়া দাবিতে পোশাক শ্রমিক বিক্ষোভ করেছে আবার। করোনাকালে এ ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। মানুষের জীবন যেখানে সংকটাপন্ন এসময়ে শিল্প মালিকদের এমন নেতিবাচক আচরণ সমর্থনযোগ্য নয়। অথচ এই নিন্দনীয় কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে ঠিকই! সাভারের আশুলিয়ায় কয়েকটি কারখানায় ছাঁটাই বন্ধ করে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
গত বুধবার বেলা ১১টায় আশুলিয়ার জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে বাইপাইল আবদুল্লাহ মহাসড়কের পাশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘণ্টাব্যাপী এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এদিন মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেড, রেজা ফ্যাশনস লিমিটেড, স্টারলিং ক্রিয়েশনস লিমিটেডসহ বিভিন্ন কারখানায় অব্যাহতভাবে ছাঁটাই বন্ধ করে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবি করেন শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত ঈদুল ফিতরের আগে থেকে মেডলার অ্যাপারেলস, রেজা ফ্যাশনের পাঁচ শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়। এক মাস গত হলেও এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষ বিষয়টির কোনো সুরাহা করেনি। শ্রমিকরা কলকারখানা অধিদফতর, শিল্প পুলিশ, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানালেও কেউই বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। অর্থাভাবে শ্রমিকরা বাসা ভাড়া, দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারায় অনেককে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই শ্রমিকরা অসহায় হয়ে পড়েছে। এর ওপর আবার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অনেক শ্রমিককে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার নির্যাতন করা হচ্ছে। আদালত বন্ধের সুযোগে মালিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ে নেমেছেন।
শ্রম আদালতের শরণাপন্নও হতে পারছে না শ্রমিকরা। করোনাকে পুঁজি করে অনেক পোশাক কারখানার মালিক বিনা কারণে অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। সেই সঙ্গে মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করছে না। শ্রমিকরা জানান, অন্যসব কারখানার মতো আশুলিয়ার মেডলার এ্যাপারেলস লিমিটেডে ২৪৫ জন, রেজা ফ্যাশনে ৩ শতাধিক, স্টারলিং ক্রিয়েশনে দুই শতাধিক, ভিনটেজ গার্মেন্টে ৪০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে কোনো পাওনা ছাড়াই। এমনকি রেজা ফ্যাশন ও মেডলার অ্যাপারেলসে ৭০০-৮০০ শ্রমিকের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানিও করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শ্রমিক নেতারা জানান, একদিকে করোনার থাবা। অন্যদিকে মালিকদের থাবা। শ্রমিকদের প্রাণ অতিষ্ঠ। বেশ কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে ঈদের আগেই ছাঁটাই করেছে।
ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার অব্যাহতভাবে সম্মিলিত উদ্যোগে শ্রমিক ছাঁটাইয়ে নেমেছেন মালিকরা। প্রতিদিনই প্রায় প্রতিটি কারখানা থেকে কমপক্ষে ১০-২০ শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। শ্রমিকরা ২০ জুনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে বিজিএমইএ কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে নানা সময়েই সমালোচনার ঝড় উঠছে। শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও মানবিক আচরণ ও বিবেচনা বোধের পরিচয় দিতে পারছেন না। যে কারণে এই সুযোগটাই নিচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। সরকারের দিক থেকেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি অদ্যবধি। আমরা প্রত্যাশা করব, বিদ্যমান সংকটে সংশ্লিষ্টরা মানবিক আচরণ করবেন। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ রেখে সবার বেতন-ভাতা পরিশোধে উদ্যোগী হবেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228