ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুজব পরিহার করতে হবে

সম্পাদকীয়
🕐 ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২০

করোনাভাইরাসের বড় প্রতিষেধক স্বাস্থ্যসচেতনতা। অথচ এর বিপরীতে বর্তমানে গুজবে ভাসছে মফস্বল এলাকা। এখানকার বাসিন্দারা নিজেদের মতো করোনার ‘ট্রিটমেন্ট’ দিচ্ছেন! সরকার কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ কানেই তুলছে না গ্রামের মানুষ। গত ৮ মার্চে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সংক্রমণ রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শুরু হয় এই ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার।

দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে শহর পর্যায়ে মানুষ কিছুটা সচেতন হলেও প্রান্তিক মানুষ আটকে রয়েছে অজ্ঞানতার বেড়াজালে। তাদের কাছে করোনা মানে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এই ভাইরাস যার হয় তার মাধ্যমে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। তারা মনে করে, করোনা তাদেরই আক্রমণ করে যাদের অনেক পাপ জমা হয়েছে! তাই করোনা আক্রান্তদের গ্রামে রাখা যাবে না।

এ বিষয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে খোলা কাগজে। নোয়াখালী অঞ্চলের নেতিবাচক চিত্র উঠে এসেছে তাতে। গ্রামে যিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তার বাড়ির চারপাশ বেড়া দিয়ে তাকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে এমন দৃশ্যেরও দেখা মেলে আকছার। যাতে করে রোগীর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে না পারে। ক্ষণে ক্ষণে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তিনি মারা গেছেন, তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে।

শুধু তাই নয়, এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে মুঠোফোনে কল করে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। নোয়াখালী অনন্তপুরের গোলাম মাওলা জেলার সমাজসেবা অধিদফতরে চাকরি করেন। হঠাৎ করে ঈদের কিছুদিন আগে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি দেখা দেয় তার। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসার দুদিন পর ফলাফল আসে করোনা পজিটিভ। এলাকাবাসী তার করোনা হয়েছে শুনে শুরু করে হুলস্থুল কাণ্ড।

এলাকাবাসী রোগীকে গ্রামে থাকতে দেবে না। থাকলে গ্রামে আরো মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে। এই অজুহাতে তার ভাইয়ের ওষুধের দোকানও বন্ধ করে দেয় গ্রামবাসী। পরবর্তীকালে পরিবারের সদস্যরা যখন জানান বাড়ি থেকে কেউ বের হবে না তখন তারা শান্ত হন। গোলাম মাওলা জানান, এরপর শুরু হয় আরেক যন্ত্রণা। ক্ষণে ক্ষণে প্রচার হতে থাকে তিনি মারা গেছেন! গত ২৪ মে আবার নমুনা পরীক্ষা করালে করোনা নেগেটিভ আসে।

তবু গ্রামবাসী তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকায় এখনো। নোয়াখালী পৌর বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী শামসুল হক ঈদের দিন জ্বর অনুভব করায় ঈদের নামাজ পড়তে মসজিদে যাননি। তখন তাকে নিয়ে পুরো গ্রামে রটে যায় শামসু মিয়ার করোনা হয়েছে! বিকালের দিকে তিনি সুস্থ অনুভব করেন। তিনি খবর পান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে তাকে!

করোনা একটি রোগ। ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব। অনেকে হচ্ছেন। রোগটাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শিক্ষিত শ্রেণিকে এগিয়ে আসতে হবে গুজব প্রতিহত করতে। এটা চলমান থাকলে একদিকে যেমন নষ্ট হবে সামাজিক শৃঙ্খলা অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধেরও সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper