পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে ভাঙন আশঙ্কাজনক
সম্পাদকীয়
🕐 ৭:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ০৮, ২০২০
ভেঙে পড়ছে পারিবারিক সম্পর্ক। বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বন্ধন। মূল্যবোধ ধসে পড়েছে আরো আগেই। যে কারণেই প্রায়ই ঘটানো হচ্ছে অনভিপ্রেত সব ঘটনা। সম্প্রতি পাবনায় স্ত্রী-কন্যাসহ খুন হয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা, তাও ঘরের ছেলের হাতেই! শহরের দিলালপুরে স্ত্রী-কন্যাসহ ব্যাংক কর্মকর্তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঘাতককে গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যাকারী তানভির হোসেন নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার হরিপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে। তিনি পাবনা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন মসজিদে ইমামতি করতেন। গত রোববার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ বিষয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে খোলা কাগজ।
জানা যায়, নিঃসন্তান ব্যাংক কর্মকর্তা দম্পতির অপত্য স্নেহই তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লাগোয়া পুরনো দ্বিতল একটি বাড়ির নিচতলায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিঃসন্তান আব্দুল জব্বার তার স্ত্রী সুম্মা খাতুন ও পালিত মেয়ে সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া সানজিদাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকতেন। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা আব্দুল জব্বারের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর ওই দম্পতির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে ছেলের মতো মিশতে থাকেন। কৌশলে জব্বারের বিশ্বাস অর্জন করেন। ইমাম তানভিরকে নিঃসন্তান দম্পতি ছেলের মতো দেখতেন, ভালোবাসতেন। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারি-সেহরি এই বাসায় করতেন তানভির। মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে রাত যাপনও করতেন। সম্পদের লোভে তানভীর তাদের হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ৩১ মে তানভীর রাত যাপনের উদ্দেশ্যে ওই বাড়িতে যান। রাতের খাবারের পর জব্বারের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। মাঝরাতে ঘুমন্ত আব্দুল জব্বারকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তানভির। এরপর পাশের ঘরে ঘুুমিয়ে থাকা সুম্মা খাতুন ও সানজিদাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর আলমারি খুলে নগদ দুই লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি ও সোনার গহনা নিয়ে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরের হরিপুরে চলে যান। হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ জুন বিকালে ওই বাড়ি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত জব্বারের ভাই আব্দুল কাদের পাবনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি জেলা গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। এর আগে পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মাকে কুপিয়ে হত্যা করে আলোচনায় আসেন কিশোরী ঐশী। কয়েক বছর আগে সংঘটিত এ ঘটনা সারা দেশে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত পৃথক সংবাদের শিরোনাম করা হয়েছে ‘এক যুগ ধরে চলছে দুই পক্ষের খুনোখুনি’। নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রায় এক যুগ ধরে চলছে দুই গ্রুপের খুনোখুনি। দুই গ্রুপের প্রধানরা একে অপর গ্রুপের হাতে খুন হওয়ার পরও থামেনি হানাহানির ঘটনা। সর্বশেষ গত ৩০ মে রাতেও ঘটানো হয়েছে সহিংসতা। এসবের অবসান জরুরি। সামাজিক সম্পর্ক যেভাবে নতজানু হচ্ছে তা কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। আইনের কঠিন প্রয়োগ ও পারিবারিক শিক্ষাই পারে এমন সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228