ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রকাশক ও বই সংশ্লিষ্টদের পাশে দাঁড়ানো সময়ের দাবি

সম্পাদকীয়
🕐 ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ০৬, ২০২০

সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্প ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়েছে। হুমকিতে পড়েছে এর সঙ্গে জড়িত হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা। শুধু প্রকাশনা ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন, তবুও বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগী একশ্রেণির ‘পাগলাটে’ মানুষ আঁকড়ে রেখেছেন পেশাটিকে। ব্যক্তির রুচি ও মানস গঠনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবক ভূমিকা রাখে বই। বই ব্যক্তির জীবনবোধকে বদলে দেয়, উপযোগিতা দ্রুত টের পাওয়া যায় না। লেখকরা চিন্তার নির্যাস পরোক্ষভাবে দিয়ে যান বইয়ে। ইতিবাচক ভাবনা পাঠকের মাঝে সঞ্চারিত হলেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটে। সেটা রাষ্ট্রের জন্য, মানব সম্প্রদায়ের জন্য বয়ে আনে সুফল। লেখকের চিন্তাপ্রসূত উদ্ভাবন চিত্তে ধারণ করলেই কিছু একটা ঘটে!

অদৃশ্য করোরাভাইরাস টালমাটাল করে দিয়েছে বিশ^ পরিস্থিতি। ধসে পড়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন ভেবে কূল পাচ্ছেন না অনেকেই। ধারণা ছিল, সৃজনশীল প্রকাশনাসহ বই ব্যবসায়ীদেরই দিতে হবে বেশি মাশুল। বই যেহেতু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ হলেই বই পাঠের প্রবণতা আসে। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে বইয়ের প্রয়োজনীয়তা না থাকাই স্বাভাবিক। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশনা শিল্পের দুর্দিনকে উপজীব্য করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় লেখক-প্রকাশকরা অবস্থান জানিয়েছেন। উৎস প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম মন্তব্য করেছেন, পেশাটা এমনিতেই ছিল ঝুঁকির মধ্যে। করোনা তার ওপর চালাল বুলডোজার। বাঙালি প্রকাশনার আরিফ নজরুল খোদ প্রকাশ করে বলেছেন, ধস তো নেমেই আছে। ছোটকাগজ সম্পাদক আবদুল মান্নান স্বপন বলেছেন, কী হবে ভেবে ভেবে আকুল!

রাজধানীর বইয়ের প্রসিদ্ধ এলাকা বাংলাবাজার, আজিজ সুপার মার্কেট, কাঁটাবন ও নিউমার্কেটে হাজার হাজার কর্মী চাকরি করেন। এরাও রয়েছেন চাকরির হারানোর আশঙ্কায়। প্রকাশকের সঙ্গে জড়িত লেখকের ভাগ্যও। মুক্তদেশ প্রকাশনের জাবেদ ইমনের আশঙ্কাই ধ্বনিত হল লেখক সাদিয়া সুলতানার প্রতিক্রিয়ায়। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব মন খারাপ হয়েছে। গত এপ্রিলে আমার একটা বই প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। প্রকাশকের সঙ্গে যখন বইমেলার পরপর কথা হয় প্রচ- উদ্যমী ছিলেন। দিন বিশেক আগে ফোনে তার নিভে যাওয়া কণ্ঠ শুনে খুব কষ্ট লেগেছে। নিজের বই প্রকাশিত না হওয়ার কষ্ট নয়, যখন বুঝলাম এই কাজের সঙ্গে অনেকগুলো মানুষ চেইনের মতো যুক্ত, তাদের পেট, রুটি-রুজি জড়িত।

মুদ্রণশিল্প স্থবির, এর পেছনে অনেকগুলো শিল্পের স্থবিরতাও কিন্তু প্রকটভাবে বোঝা যায়। পোশাক, ওষুধ শিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসবকেন্দ্রিক লিফলেট, ব্যানার, ট্যাগ ইত্যাদি বন্ধ। এর সঙ্গে সঙ্গে যেন বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের আনন্দ-উৎসবের সব প্রবাহও। প্রার্থনা করছি, সব দ্রুত ঠিক হয়ে যাক। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রকাশক, বই ব্যবসায়ী এবং কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। সরকার ইতিপূর্বে বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করলেও সেটা নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে সবকিছু থমকে থাকায় সংশ্লিষ্টরাও দুর্ভাবনায় দিন কাটাচ্ছেন। নোট-গাইড বইয়ের ইতি-নেতিবাচক বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে বলা যায়, এর সঙ্গে জড়িতদের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে। প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper