ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিনা পারিশ্রমিকে পিপিই তৈরির প্রশংসনীয় উদ্যোগ

সম্পাদকীয়
🕐 ২:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০২, ২০২০

যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়ায় মানুষই। একে অপরকে সহযোগিতা করার মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্ব, মানবতাবোধ। সবশেষে জয়ী হয় সভ্যতা। সভ্যতার আলোক বিকিরণে মানবজীবনে লাগে মঙ্গলজনক অধ্যায়ের আঁচড়। বিশ^জুড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানার মালিক-শ্রমিকরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের অসংখ্য পোশাক কারখানার মধ্যে আজমত অ্যাপারেলসে তৈরি হয় রপ্তানিমুখী পোশাক।

শিল্পাঞ্চলের কাঠগড়ায় এই কারখানা অবস্থিত। করোনার প্রভাবে এই কারখানার আশপাশের কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকরা ছুটিতে। কিন্তু আজমত অ্যাপারেলস কারখানার পাঁচ শতাধিক শ্রমিক ছুটিতে যাননি। ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানায়। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) তৈরি করতে। পিপিই তৈরির বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না পাঁচ শতাধিক শ্রমিক। করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই বিনা পারিশ্রমিকে ৫০ হাজার পিপিই তৈরি করছেন তারা।

আজমত অ্যাপারেলস মূলত আজমত গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমত রহমান নিজেই ৫০ হাজার পিপিই তৈরির এ উদ্যোগ নেন। করোনা প্রতিরোধে কাজ করা চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য পেশার মানুষের সুরক্ষায় এসব পিপিই ফ্রি বিতরণ করবেন তিনি। আজমত রহমান বলেন, করোনার প্রভাব শুরু হলে আমরা কারখানা ছুটি ঘোষণা করি। কারখানার পাঁচ হাজার শ্রমিক ছুটিতে চলে যান। পরে পিপিই তৈরির উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য কিছু শ্রমিকের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল পাঁচ শতাধিক শ্রমিক ছুটিতে না গিয়ে পিপিই তৈরির কাজ শুরু করে দেন। এজন্য মজুরি দিতে চাইলেও নিতে রাজি হননি শ্রমিকরা।

কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ মার্চ থেকে পিপিই তৈরির কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে ৩০ হাজার পিপিই তৈরি হয়ে গেছে। এসব পিপিই বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় যেসব হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হয় সেসব হাসপাতালে পিপিই দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পুলিশ প্রশাসন ও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিপিই দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে পিপিই তৈরিতে কর্মরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, আগে ৩০ হাজার পিপিই’র কাজ শেষ হওয়ায় বিতরণ করা হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত আরও ১২ হাজার পিপিই তৈরি শেষ হয়েছে। আরও আট হাজার পিপিই’র কাজ শেষ হলে বিতরণ করা হবে। এরপর ছুটিতে যাবেন তারা।

কারখানার শ্রমিকরা বলেন, আমরা পোশাক বানাই। আমাদের তৈরি পোশাক দেশ-বিদেশের মানুষ পরেন। সারা জীবন তো পোশাক তৈরি করে উপার্জন করেছি। এবার না হয় দেশের দুর্যোগে দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করলাম। স্বেচ্ছাশ্রমে পিপিই তৈরি করে দিতে পারায় আমরা গর্বিত। পিপিই পরে অনেক চিকিৎসক, নার্স এবং সাধারণ মানুষ সুরক্ষিত থাকবেÑ এটি ভেবেই আনন্দ পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের, অনেক বড় প্রাপ্তির। মালিক-শ্রমিকের এ মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন, পেশাজীবীদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন এই নিদানকালেও আশান্বিত করে। আমরা সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানাই, তাদের সদিচ্ছায় প্রণতি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper