ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শ্রমিকদের ঝুঁকিতে ফেলবেন না

সম্পাদকীয়
🕐 ১:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২০

শ্রমিকরা বরাবরই যেকোনো দুর্যোগে কর্তৃপক্ষের লোভের বলি হয়। মেলে না তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পাওয়া যায় না প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। মুনাফালোভীদের কাছে শ্রমিকদের জীবন জিম্মি হয়ে রয়েছে একপ্রকার। এ বিষয়টিই আবার উঠে এসেছে খোলা কাগজে। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ মরণঘাতক করোনা বিস্তাররোধে দেশব্যাপী চলছে ১০ দিনের অঘোষিত লকডাউন। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ধরণের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কারখানা বন্ধ রয়েছে। যদিও পোশাক কারখানা সরকারের নির্দেশনার পরও দুদিন চলেছিল। পরে তাও বন্ধ ঘোষণা করে বিকেএমইএ। পাশাপাশি বিজিএমইএও বন্ধ রাখার সুপারিশ করে। কিন্তু সরকার নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খোলা রাখা হয়েছে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের কারখানাগুলো। যেখানে কাজ করেন জেলার ৩৫ হাজার নারী-পুরুষ। তাই উত্তরা ইপিজেড লকডাউনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে নীলফামারীবাসী। জরুরি ভিত্তিতে ইপিজেডের অভ্যন্তরে থাকা কলকারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণার জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন অনেকে।

গোটা নীলফামারী জেলা ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন। মানুষজন ঘরবন্দি। কিন্তু খোলা রাখা হয়েছে সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নে অবস্থিত বেপজার উত্তরা ইপিজেড। সেখানে কাজ করছে এ জেলার প্রায় ৩৫ হাজার নারী-পুরুষ। তাদের প্রতিদিন সকাল ৭টায় যেতে হয় ইপিজেডে ও বাড়ি ফিরতে হয় সন্ধ্যায়। নীলফামারীবাসী করোনা ভাইরাসে ঘরবন্দি হলেও এই শ্রমিকরা গৃহবন্দি হয়নি। একদিন কাজে না গেলে তাদের চাকরি থাকবে না। তারা বাধ্য হয়ে চাকরি হারানোর ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। একজন এলাকাবাসী ফেসবুকে লিখেছেন, অতিসত্বর উত্তরা ইপিজেড বন্ধ ঘোষণা করুন। কেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তরা ইপিজেডে চায়নাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোকে প্রোডাকশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য এ জরুরি ছুটি ঘোষণা করেননি।

উত্তরা ইপিজেডে কয়েকটি ফ্যাক্টরি ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ভেলাটেক্স, দেশবন্ধু, সেকশন সেভেন, উত্তরা সোয়েটার্স অন্যতম। এখন যেসব ফ্যাক্টরি চালু রয়েছে, তারমধ্যে ভেঞ্চুরা লেদারওয়ার, মাজেন বিডি, সনিক বিডি, এভারগ্রীন। এসব কোম্পানি এখনও দিব্বি খোলা এবং অধিকাংশ কোম্পানিই চায়নিজ কর্তৃক পরিচালিত। প্রধানমন্ত্রী যেখানে ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনাও ঘোষণা করেছেন। সেখানে কীভাবে, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনাকে এভাবে অগ্রাহ্য করে উত্তরা ইপিজেডের দুচারটে কোম্পানি। এভাবে লকডাউন ভেঙে যদি প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ কাজে যাওয়া আসা করতে থাকে আর চায়নিজদের তত্ত্বাবধানে থেকে যদি কেউ সংক্রমিত হয় করোনা ভাইরাসে বা যেকোনো অন্য উপায়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পরলে এজন্য কে দায়ী থাকবে!

এলাকাবাসীর মন্তব্য, উত্তরা ইপিজেড লকডাউন করা জরুরি। উত্তরা ইপিজেডে বিশে^র বিভিন্ন দেশের ৩১টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ২২ চালু রয়েছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি ইপিজেড এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এই ইপিজেডে চীনা নাগরিক থাকায় আমরা বেশি আতঙ্কিত। নিজেদের মুনাফার জন্য শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কতটা শোভন! উদ্যোক্তাদের অনুধাবন করতে হবে, শ্রমিকরা সুস্থ থাকলে আগামীতে সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। রাষ্ট্রে ব্যবসা করতে হলে রাষ্ট্রের বিধিবিধানও মেনে চলা জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকবান্ধব অবস্থান নেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper