গণপরিবহনে ধর্ষণ-নির্যাতন সাজা নিশ্চিত করুন
সম্পাদকীয়
🕐 ৯:৪১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
গণপরিবহনে বিরাজমান নানাবিধ বিশৃঙ্খলার বিপরীতে যাত্রী সাধারণ একপ্রকার নিরুপায়। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা কিংবা সব সয়ে নেওয়া ছাড়া তার যেন কিছুই করার নেই! এ ক্ষেত্রে সরকারও একপ্রকার নতি স্বীকার করেছে। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ছোট একটি অংশের নেতা-কর্মীরা পরিবহনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে। সরষের ভেতরেই যেন ভূতের বাসা! যে কারণে বিগত দিনে সরকার পরিবহন খাতের নৈরাজ্যের সুরাহা করতে চেয়েও শেষপর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীর দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে অভূতপূর্ব ‘কিশোর আন্দোলন’ সংঘটিত হয়। তাদের দাবির মুখে করা হয় নতুন আইনও। তাতেও কমেনি সড়কে মৃত্যু ও নানাবিধ অপরাধের প্রকোপ।
গত বছর গণপরিবহনে ৫২টি ঘটনায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৯ নারী। দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে এসব নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত সোমবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, সড়ক পথে ৪৪টি, রেলপথে ৪টি ও নৌপথে ৪টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৬টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ৯টি ধর্ষণের চেষ্টা ও ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে এসব ঘটনায় ৪৪টি মামলা দায়ের করা হয় যার পরিপ্রেক্ষিতে ৯৩ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, গত বছরের এই পরিসংখ্যান শুধু প্রতীকী চিত্র বহন করে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার ভয়াবহতা অনেক বেশি। বাংলাদেশের নারীরা লজ্জা, সামাজিক মর্যাদা ও মামলা করে হয়রানি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অসংখ্য ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গণপরিবহনে যাতায়াতকালে নারীরা প্রতিনিয়ত অসম্মানজনক আচরণ, নিপীড়ন, হেনস্তা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে কেবল পরিবহন শ্রমিকই নয়, পুরুষযাত্রীরাও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। ২০১৭ সালে গণপরিবহনে রূপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশবাসীর তীব্র প্রতিবাদের কারণে স্বল্প সময়ে ওই ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়। এতে ৪ পরিবহন শ্রমিককে ফাঁসি ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গণপরিবহনে নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা কমাতে কয়েকটি সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেগুলো হলো- গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের আলাদা নেমপ্লেটসহ ইউনিফর্মের ব্যবস্থা করা; চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ডাটাবেইজ তৈরি করা; গাড়ির ভেতরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নাম্বার, ফোন নাম্বার ও গাড়ির নাম্বার সাঁটানোর ব্যবস্থা করা। এছাড়া- গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো; বাস মিনিবাসে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন দরজার আশপাশে রাখা; গণপরিবহনে অস্বচ্ছ ও বিজ্ঞাপনে মোড়ানো কাচের ব্যবহার বন্ধ করা; যৌন সহিংসতার মামলা, গ্রেফতার ও বিচার দ্রুত শেষ করা। আমরা মনে করি, শুধু কঠোর আইন নয়, কঠোর সাজাও বাস্তবায়ন করা জরুরি। সড়কের যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার বিপরীতে যথোপযুক্ত সাজায় কমতে পারে অপরাধপ্রবণতা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228