রোহিঙ্গা ইস্যুর সুষ্ঠু নিষ্পত্তি কাম্য
সম্পাদকীয়-১
🕐 ৮:২৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
দেরিতে হলেও পথ খুলল মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের। মঙ্গলবার থেকে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের মুখোমুখি হলেন মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি। শান্তিতে নোবেল পাওয়া সু চি যে অশান্তির আগুনে ইন্ধন জুগিয়েছেন সেই আঁচ রাখাইনের রোহিঙ্গা হয়ে লেগেছে বাংলাদেশের গায়েও। বিশ্বের পরাশক্তি ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোতে পাশে না পেয়ে বাংলাদেশ চালিয়ে যাচ্ছে একার লড়াই।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে মিয়ানমার বয়কটের ডাক দিয়েছে ১০ দেশের ৩০টি মানবাধিকার সংস্থা। গতকাল থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজেতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি হবে। শুনানিকে সামনে রেখে মিয়ানমারের ওপর চাপ জোরালো করতে পদক্ষেপ নিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার অভিযোগ এনে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগ থেকেই ছিল বিভিন্ন সময়ে আসা প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভারে বিপর্যস্ত অবস্থা বাংলাদেশের। উজাড় হচ্ছে বন-পাহাড়, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ-পরিস্থিতি। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজার হারাচ্ছে স্বকীয়তা। অন্যদিকে চাইলেও তাদের অন্যত্র পুনর্বাসন করা যাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি চিহ্নিত কিছু এনজিও এক্ষেত্রে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বহির্বিশ্বে ষড়যন্ত্রের আভাসও।
বাংলাদেশ প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে নিমরাজি থাকলেও একপর্যায়ে মানবিক কারণেই রাজি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হন। পরিচিতি পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে। উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে চাপ দিলে দেশটি নানা কূটকৌশলে প্রত্যাবর্তন বাধাগ্রস্ত করে। প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও সেটা থেকে গেছে কাগজে-কলমেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন অং সান সু চি।
একপর্যায়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করেও মিথ্যাচার চালিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সুষ্ঠু সমাধান না হলে রোহিঙ্গারাই হয়ে উঠতে পারে বিষফোঁড়ার মতো। নানামুখী অশান্তিসহ জঙ্গিবাদ উত্থানের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমাদের প্রত্যাশা, চলমান বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228