ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিঘ্ন

কার্যকর উদ্যোগ কাম্য

সম্পাদকীয়-১
🕐 ৯:০৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০১৯

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জেরবার হচ্ছে বাংলাদেশ। আক্ষরিক অর্থেই দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ। দেখা যাচ্ছে না উত্তরণের আলোকরেখা। কূট-কৌশলী মিয়ানমার এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’-‘অবন্ধু’ কেউই আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসছে না। পর্বতের মুষিক প্রসবের মতো শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার নগণ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা ফেরতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রত্যাবাসন। মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারকে। এদের ফেরত যাওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। ফেরেনি একজন রোহিঙ্গাও। মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরত যাওয়ার সব শর্ত পূরণ করেনি- কারণ দেখিয়ে পিছু হটেছে শরণার্থীরা!

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরও এমন অবস্থা বাংলাদেশের জন্য যারপরনাই বিব্রতকর। একদিকে মিয়ানমার জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করছে, অন্যদিকে দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে রোহিঙ্গারাও জুড়ে দিচ্ছে নানা রকম শর্ত; এর বাইরেও রয়েছে বিশ্বমোড়ল জাতিসংঘ, এনজিও ব্যবসায়ী এবং ঘোলাজলে মাছশিকারিরা। এ অবস্থায় তবে কী করবে বাংলাদেশ! সিন্দাবাদের ভূত হয়ে বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে কী করবে সরকার! আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল চার লাখ রোহিঙ্গা, নতুন করে এসেছে আরও সাত লাখ।

সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ফেরত উপলক্ষে গতকাল সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় কয়েকশ’ পরিবারের। এদের মধ্যে একজনও পাওয়া যায়নি যে শর্তবিহীনভাবে স্বদেশে ফিরতে চান! চীনা প্রতিনিধিদলের দুজন সদস্য, মিয়ানমারের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন কক্সবাজারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। তিনি জানান, প্রত্যাবাসনের তৎপরতা শুরু হলে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে চলার নিরাপত্তা, ফেলে আসা সম্পত্তি ফেরত ও নিরাপত্তা নজরদারির শর্ত দিয়েছিলেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য যে নির্ধারিত সময় ছিল, তাতে সরকার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার প্রথম থেকে বলছে, কোনো রোহিঙ্গা নাগরিককে জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো হবে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সত্যিকার অর্থে কেউই নেই বাংলাদেশের পাশে। না কোনো দেশ, না কোনো প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ভারত, চীন, রাশিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্র- সবাই নিজ নিজ স্বার্থ ও কৌশল অনুযায়ী ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যে মানবিকতা ও উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হলেও শেষপর্যন্ত গলার কাঁটা হয়ে উঠছে। খোদ রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশকে ‘মুক্তি’ দিচ্ছে না। উদ্যোগী হচ্ছে না নিজেদের সমস্যা সমাধানে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের কৌশল পরিবর্তনের বিকল্প নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কূটনীতিকসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper