ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশেষ মর্যাদাহীন কাশ্মীর

যুদ্ধ-রক্তপাত থামাতে হবে

সম্পাদকীয়-১
🕐 ৯:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০১৯

পৃথিবীর ভূস্বর্গ-খ্যাত কাশ্মীর নিয়ে শুরু হলো নতুন রাজনীতি। এতদিন ভারত-পাকিস্তান-চীনের সীমান্তবর্তী জম্মু-কাশ্মীর বিশেষ অঞ্চল হিসেবে থাকলেও এখন এর বড় অংশ ভারতের। দুদিন আগে আলাদা পতাকা এবং পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকলেও এখন থেকে অন্য রাজ্যগুলোর মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে কাশ্মীর। ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করতেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ স্বীকৃতি উঠিয়ে ওই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিল বিধানসভা। কিন্তু শুধুমাত্র ইশতেহারের শর্ত পূরণ করতেই বিজেপির একতরফা সিদ্ধান্তে মর্যাদা হারালো স্বর্গরাজ্য কাশ্মীর।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের কারণে জম্মু-কাশ্মীর এতদিন যে কোনো রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। কিন্তু রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ফলে ভারতে একদিকে যেমন সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল তেমনি স্বায়ত্তশাসিত কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাও বিবেচনা করা হলো না। যে কারণে এরই মধ্যে ভারতসহ আন্তর্জাতিক কূটনীতিক, বোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদরা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, বর্তমান সরকার এই পথে এগোতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। কেউ আবার এই ঘটনাকে ‘ইতিহাসের সব থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল ব্যতীত অন্য সবাই এর সমালোচনাই করছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভোটার এবং বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের এই কাজের প্রভাব বিশ্বরাজনীতিতে পড়তে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান এবং চীনে নিঃসন্দেহে এর প্রভাব পড়বে। চীন এককেন্দ্রিক হওয়ায় তাদের থেকে নিরাপদেই থাকবে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব এখন আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। ফলে, শুধু জম্মু-কাশ্মীর নয় বরং ভারতজুড়েই পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। তাছাড়া, অনেকেই মনে করছেন কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নেওয়ায় জঙ্গিবাদেরও উত্থান ঘটতে পারে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার অন্তত দেশজুড়ে একটি গণভোটের আয়োজন করতে পারত। সেখান থেকে অন্তত বোঝা যেত মানুষ কি চাইছে। অথচ, তা হয়নি।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভাগের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ চলছে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পাকিস্তান এবং চীনেরও অংশ রয়েছে। পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ফলে সামনের দিনগুলোতে ভূস্বর্গে আরও অঘটনের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, বেশকিছু শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিজেপির এমন কাজ করায় তারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বছরের পর বছর চলমান সংঘাতে অসংখ্য স্থানীয় মারা পড়লেও এখন এর ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে, আমরা কোনো যুদ্ধ কিংবা রক্তপাত চাই না। জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত হলেও ভারতে যেন শান্তি-নিরাপত্তা জোরদার থাকে, প্রতিবেশী হিসেবে এটাই আমাদের প্রতাশা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper