বন্যার পানি কমছে
দুর্ভোগ রোধে ব্যবস্থা নিন
সম্পাদকীয়-১
🕐 ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ফি বছরই আমাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বন্যার্ত মানুষ এ সময়ে যে পরিমাণ দুর্বিষহ ভোগান্তির মুখে পড়েন তা এক কথায় অবর্ণনীয়। নিজেদের বসতভিটা ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন আর ত্রাণের জন্য হাহাকার বানভাসি মানুষের কষ্টকে সীমাহীন করে তোলে।
দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বন্যা আমাদের গ্রামীণ জীবনের অংশ। তবে ভয়াবহ বন্যার ক্রান্তিকালে সবকিছু হারিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রার দিকে যায় বন্যার্তরা। অসহায় দৃষ্টিতে প্রসারিত হাতটুকু তখন আঁকড়ে ধরতে চায় বেঁচে থাকার সম্বল বা শুকনো একটু খাবার। বন্যায় মানবিক এক বিপর্যয়ের স্রোতে সব যেন ভেসে যেতে চায়। ক্ষুধার্তের যন্ত্রণা মিশ্রিত হাহাকারে ভারী হয় বাতাস। বন্যার অল্প সময়ের জন্য এলেও ক্ষতির দাগ থেকে যায়। এক সময় পানি নেমে যায়। তখন সবচেয়ে প্রয়োজন হয় খাদ্যের জোগান এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা এবং নতুনভাবে শুরু করার অভিপ্রায়ে যে উদ্যম সে সময়ে দরকার হয়, তাই তখন বানভাসি মানুষের আকাক্সিক্ষত বস্তু। এই বছর বন্যা অল্প সময়ের জন্য হলেও তাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতে হলে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছাতে হবে দ্বারে দ্বারে।
অতীতের এমন চিত্র এবারও পরিলক্ষিত হচ্ছে। খোলা কাগজে প্রকাশ, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীসহ দেশের প্রধান নদীগুলোতে পানি কমতে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। তবে প্লাবিত অঞ্চলগুলোর মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। ঘরবাড়ি, রাস্তা স্বাভাবিক না হওয়ায় এখনো কার্যত পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ। অন্যদিকে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গবাদি পশুপাখি বাঁচাতেও প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে যুদ্ধ। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণের পরিমাণও ব্যাপক হারে কমেছে। তাই অনাহারে অর্ধাহারে ও নানা প্রতিকূলতায় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে জীবন কাটাচ্ছেন বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলের মানুষকে।
আমরা এমন অমানবিক চিত্রের অবসান দেখতে চাই। দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। বন্যার্তরা যেন পুনর্বাসনের সুযোগ পান, সেজন্য রাষ্ট্রকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সঙ্গে সমাজের সামর্থ্যবান মানুষদেরও উচিত বন্যার্তদের নতুনভাবে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করা।
এ ছাড়াও অসহায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের সাধারণ মানুষ সম্মিলিতভাবে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তার প্রত্যাশাও বর্তমান সময়ে প্রয়োজন। প্রত্যন্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সহযোগিতা শুধু সাহায্য হিসেবে নেওয়ার চাইতে বরং নতুন জীবন সূচনার রসদ হিসেবে গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এভাবেই সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় মানবিক যে সমাজ গড়ার স্বপ্ন আমাদের, সে সমাজ বিনির্মাণে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। এখন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোটাই মুখ্য।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228