ভয়াল গণহত্যার দিন আজ
বাঙালিকে রুখতে পারেনি অপারেশন সার্চলাইট
সম্পাদকীয়-১
🕐 ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০১৯
বাঙালির কাছে ‘কালরাত্রি’ হিসেবে পরিচিত ভয়াল ২৫ মার্চ আজ। ১৯৭১ সালের এই রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে হত্যাযজ্ঞের মানসে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালিদের ওপর। ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ রাজধানীর বিপুলসংখ্যক জনপদে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি সেনারা। পরের দিন থেকে দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলশামস ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালায়। কিন্তু লাখ লাখ তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েও তারা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়নি বাংলা এবং বাঙালির স্বাধীনতা।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভাজনের পর দুই পাকিস্তান সৃষ্টি হলে বৈরিতা দানা বাঁধতে থাকে। এরপর থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানি (পাকিস্তান) শাসকরা সার্বিক দিকেই নির্যাতন-নিপীড়ন করতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) লোকজনের ওপর। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এতে প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের হাতে দুই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা যাওয়ার সুযোগ হয়। ফলে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাকিস্তানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা। এরপরই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়।
জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতার এক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।
এরপর থেকে দেশব্যাপী চলে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও লুটপাট। এই পর্যায়ে বাঙালিরাও দেশ এবং স্বাধীনতা রক্ষায় নেমে পরে দুর্বার সাহসে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু হয় মুক্তি সংগ্রামের লড়াই।
সেদিন থেকে শুরু হওয়া গণহত্যা অব্যাহত থাকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী এদেশীয় দোসররা যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল তা সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ। সেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলছে এবং অনেকে কঠোর শাস্তিও ভোগ করেছেন। অথচ বর্বর জাতি পাকিস্তানিরা এখনো নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়নি। ’৭১-এ যেমন বাঙালি রুখে দিয়েছে পাকিদের অপশক্তি, একই সঙ্গে স্বাধীনতার প্রেরণা এবং চেতনা নিয়ে দেশও এগিয়ে চলেছে দুর্দান্ত গতিতে। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মাতৃভূমি-স্বাধীনতা এই দিনে তাদের প্রতি রইল বিনীত শ্রদ্ধা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228