আপন গৃহে অনিরাপদ নারী
এ লজ্জার অবসান চাই
সম্পাদকীয়
🕐 ৯:১৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯
কিছুদিন আগে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণমূলক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নারীরা নিজ ঘরে বা পরিবারেই সবচেয়ে অনিরাপদ ও নির্যাতনের শিকার। তারই একটি প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল বেসরকারি দাতা সংস্থা অ্যাকশন এইডের একটি গবেষণা প্রতিবেদনেও। এতে বলা হয়েছে, দেশে ঘরের মধ্যেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন ৬৬ ভাগ নারী। গণমাধ্যমে বাড়ির বাইরের সহিংসতা এবং যৌন সহিংসতাকে বেশি তুলে ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে নারীরা ঘরেই বেশি অনিরাপদ।
বাংলাদেশের ২০টি জেলায় সংঘটিত সহিংসতার তথ্য, পুলিশ রিপোর্ট, বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম, মিডিয়া প্রতিবেদন প্রভৃতি থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা করা হয়েছে। এতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, প্রচলিত ধারণা এবং পিতৃতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস হচ্ছে নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে নারীদের প্রতি বেশিরভাগ সহিংসতা বাড়িতে সংঘটিত হয়। ঘরের মধ্যে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে গড়পড়তা দুজন নানাভাবে পরিবারের লোকজনের দ্বারা আক্রান্ত হন।
পৃথিবীতে আদিম যুগে কৃষির সূচনার পর থেকেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বিলুপ্ত হয়ে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের উত্তরাধিকারী নির্বাচন এবং সেই সূত্রে সন্তানের পিতৃপরিচয় শনাক্তকরণটাও জরুরি হয়ে পড়ে। তখন থেকেই শুরু হয়, নিরাপত্তা তথা সতীত্ব রক্ষার অজুহাতে নারীদের অসূর্যস্পশ্যা বা পর্দানশীন করে রাখা। সেই ধারাই এখনো সমানে চলছে। গোঁড়া ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এ প্রবণতা বর্তমান সময়ে আরও বেড়ে গেছে। এ দৃষ্টিভঙ্গির ধ্বজাধারীরা বারবার উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে চলেছে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নারীদের পবিত্রতা তথা নিরাপত্তা রক্ষার্থে তাদের বাইরে না পাঠিয়ে ঘরের ভেতরে রেখে দেওয়াই শ্রেয়। অতিসম্প্রতি এক আলেমের আলোড়ন সৃষ্টিকারী মন্তব্যেও এ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি তার অনুসারীদের আহ্বান জানিয়েছেন মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে না পাঠিয়ে ঘরের মধ্যে রেখে দিতে। বলেছেন, বেশি লেখাপড়া করতে গিয়ে তারা পরপুরুষের লোভ-লালসার শিকার হবে।
অথচ জাতিসংঘ বা অ্যাকশন এইডের প্রতিবেদনে যে সত্য উঠে আসছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, আসলে বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা। ঘরে নারীর রক্ষকের ভূমিকায় স্বামী প্রভৃতি যে পুরুষরা রয়েছে, তারাই প্রায়শ নেমে যাচ্ছে ভক্ষকের ভূমিকায়। এ অবস্থা বা দুরবস্থার নিরসনে অ্যাকশন এইড কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে। ঘরে-বাইরে নারীদের প্রতি সহিংসতা নির্মূলে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো চিহ্নিত করার ব্যাপারে তাদের সচেতন করা ও ক্ষমতা বাড়ানো প্রভৃতিতে সরকারি পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। এসব সুপারিশ যেন মাঠে মারা না যায়, সেটা নিশ্চিত করাই এখন একান্ত কর্তব্য সংশ্লিষ্ট সবার।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228