ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী

শান্তিপূর্ণ পুনর্বাসনই সমাধান

সম্পাদকীয়-১
🕐 ৯:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮

গতকাল উদযাপিত এবারের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে স্বভাবতই দেশে বর্তমানে অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীই ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। স্বদেশ মিয়ানমারে অপরিসীম নির্যাতন-নিপীড়ন, সন্ত্রাস-সহিংসতার সম্মুখীন হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মুখোজ্জ্বল হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু অনেক চেষ্টা ও কূটনৈতিক তৎপরতার পরও এদের কোনোমতেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে না পারায় বাংলাদেশ বড় বিপাকে পড়ে গেছে, একথাও অনস্বীকার্য।

পড়শি দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ায় গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা দলে দলে পালিয়ে আসতে শুরু করে। বর্তমানে এ দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে সংকট সমাধানের জন্য পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন। একই সংকট সমাধানের জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টাও করে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর তিন মাসের মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন সমঝোতা করে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। এ সংকটের অবসান চেয়ে নিরাপত্তা পরিষদ একটি যৌথ বিবৃতিও দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। মিয়ানমার সরকারপ্রধান অং সান সু চির অধিকাংশ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি দলসহ বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন।

গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে সম্মত হয়। তবে এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং সহায়তা সংস্থাগুলো। এ পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিগুলো ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছরের শেষে একাদশ সাধারণ নির্বাচনের পর প্রত্যাবাসন বিষয়ে আরও কিছু শর্ত পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনাও রয়েছে বলেও এ ঘোষণায় জানানো হয়।

সত্যি বলতে কী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমুখী প্রয়াস সত্ত্বেও মিয়ানমারের নানা টালবাহানা ও কূটকৌশলের কারণে বাংলাদেশ একটা ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। মানবিক কারণে একদিকে যেমন এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ তাড়িয়ে দিতে পারছে না, অন্যদিকে মাসের পর মাস এত বিশালসংখ্যক একটি জনগোষ্ঠীর ব্যয় নির্বাহ করাও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সম্মিলিত প্রয়াসে আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পুনর্বাসনের মাধ্যমে এ সংকটের অবসান হবে, সেটাই এখন একমাত্র প্রত্যাশা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper