প্রত্যাবাসনের ভয়ে রোহিঙ্গাদের পলায়ন
সুষ্ঠু সমাধান কাম্য
সম্পাদকীয়-১
🕐 ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০১৮
নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত যখন প্রক্রিয়াধীন, তখন রোহিঙ্গাদের পলায়নের চিত্র আমাদের কাছে ফুটে উঠেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জন্য খুবই যন্ত্রণাকর হওয়ায় আমরা যখন এ সংকট সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করছি, সে সময়ে এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পত্রিকায় প্রকাশ, সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
গত বুধবার দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল থেকে একটি নৌকাযাত্রা শুরু করলে তাদের আটক করে কোস্টগার্ড। এ ছাড়া রাখাইন থেকেও কয়েকটি নৌকায় মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রোহিঙ্গারা রওনা দিয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে রোহিঙ্গা নেতা, ত্রাণকর্মী ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর তারিখ সামনে চলে আসায় মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার উদ্দেশেই পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা।
টেকনাফ উপজেলার কোস্টগার্ড প্রধান ফয়জুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ৩৩ রোহিঙ্গা ও ছয় বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে কোস্টগার্ড। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাখাইনের উপ-পরিচালক কিয়াও সোয়ার তুন বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। তবে এখনো পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেওয়ার সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। তবে, চলতি মাসের মাঝামাঝিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং লি বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি আগের মতোই আছে। বৌদ্ধরা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে। আরাকান প্রকল্পের পরিচালক ক্রিস লেওয়া বলেন, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তে অনেক রোহিঙ্গা পাচারকারী চক্রের শরণাপন্ন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা ফাঁদে আটকে গেছে। তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাদের কেউ আশ্রয়ও দিতে চায় না। আর এখন প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতেও পড়েছে তারা।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কানাডা। কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে এখনো অপেক্ষায় রয়েছে দেশটি। একজন কানাডিয়ান কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আমরা প্রত্যাশা করি আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে। কারণ আমাদের দেশের স্বার্থেই আমরা দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা সংকটকে জিইয়ে রাখতে পারব না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নিন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228