আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মহাপ্রয়াণ
এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়
সম্পাদকীয় ডেস্ক
🕐 ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২২
চলে গেলেন একুশের গানের রচয়িতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলাম লেখক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে লন্ডনে মারা যান তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সর্বাধিক আবেদন সৃষ্টিকারী।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ-এ সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ?দৈনিক ইনসাফ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ প্রকাশ হলে গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন পার করেছেন তিনি। এছাড়াও মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশি’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বার্তায় এ শোক জানান। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন ও প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব আশরাফ সিদ্দিকী বিটু এ তথ্য জানিয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।
একজন মনস্বী সাহিত্যিক কিংবা গীতিকার হিসেবেই নন, কলাম লেখক হিসেবেও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী অনন্য। শেষ জীবনে ব্রিটেনে বসবাস করতেন তিনি। সেখান থেকেই বাংলাদেশের একাধিক দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখতেন। চলমান ঘটনাপ্রবাহের নির্মোহ ভাষ্য পাঠককুল লুফে নিয়েছিল। সুদূর লন্ডনে বসে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী যে ভাষ্য দিতেন, আর স্বদেশে বসে সরাসরি ঘটনা চাক্ষুষ করেও অনেকেই তা উপলব্ধিতে আনতে পারতেন না। এটাই হচ্ছে একজন সময়ের ধারা ভাষ্যকারের শক্তি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই; রয়ে গেছে তার অনন্য সৃষ্টিসম্ভার। এসব নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে পথ দেখাবে জাতিকে। এই শোক কখনই ফুরাবার নয়। বরেণ্য এই ব্যক্তির তিরোধানে আমরা শোকাহত।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228