ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্প্রেড কমাতে অসহায় বাংলাদেশ ব্যাংক

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০১৮

সুদ হার কমাতে আগে স্প্রেড (আমানত সংগ্রহ ও বিতরণের মাঝে বিস্তার) কমাতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বার বার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে ৫ শতাংশের নীচে এবং পরে ৪-এ নামাতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংক নির্দেশনা মানছে না। এক্ষেত্রে অনেকটাই অসহায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে এ নির্দেশনা না মানার ব্যাপারে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকই মনে করছে কম সুদের সরকারি আমানত নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ ও ৯ শতাংশ হারে বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ৪ এর উপরে স্প্রেড আছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৩৪ টি। এর মধ্যে ১৪ বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্প্রেড হার ৫ শতাংশেরও উপরে। আর অস্বাভাবিক স্প্রেড হলো হলো ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের। এর মধ্যে ৪ বিদেশি ব্যাংক ও ২ দেশি ব্যাংক। বিদেশি স্ট্যান্টার্ড চাটার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহ করে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ হারে; বিতরণ করে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ হারে। সিটি ব্যাংক-এনএ এর স্প্রেড হার ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহ করে দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে; বিতরন করে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে। এইচএসবিসি ব্যাংকের স্প্রেড হার ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, আমানত সংগ্রহ ২ দশমিক ১৬ শতাংশে, বিতরণ করে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারে। অস্বাভাবিক স্প্রেড হারের মধ্যে রয়েছে অপর বিদেশি ব্যাংক উরি।

দেশি বাণিজ্যিক ব্যংকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্প্রেড হার ব্র্যাক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের। এরমধ্যে ব্র্যাক আমানত সংগ্রহ করে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশে, বিতরণ করে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকটির জুন নাগাদ মোট ঋণ বিতরণ (আউটস্টান্ডিং) ১৮ হাজার ৭৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। খেলাপির পরিমান ৭০৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৮৭৪ শতাংশ।  এর মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমান  ৫৩১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হারের চেয়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার কম। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। ব্যাংকটি মুলধন ও প্রভিশন সংরক্ষণে এগিয়ে আছে। বেশি মুনাফা করার জন্য আমানতকারি ও ঋণের গ্রহিতাদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি টাকা।   

অপর অস্বাভাবিক স্প্রেড ডাচ বাংলা ব্যাংকের। ব্যাংকটি সংগ্রহ করে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে, বিতরন করে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশে; স্প্রেডের হার ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ ব্যাংকটিও কম সুদে আমানত সংগ্রহ করে। আবার বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করে। ব্যাংকটির মোট বিতরন করা ঋণের পরিমান ২০ হাজার ৫৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর খেলাপি ঋণের পরিমান ৯১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি। মুলধনও প্রভিশন সংরক্ষনে এগিয়ে আছে ব্যাংকটি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম মুনাফাকারী ব্যাংক হলো এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটি। কম সুদে আমানত বাগিয়ে নেওয়া ও গ্রাহকদের কাছে থেকে তুলনামূলক বেশি সুদ আদায় করার দিকেও ব্যাংকটি এগিয়ে আছে।

৬ শতাংশ হারে ঋণ আমানত সংগ্রহ ও ৯ শতাংশ হারে বিতরণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বশেষ যে পরামর্শ দিয়েছে তার কোনো তোয়াক্কাই ব্যাংক দুটি করে না। অন্যদিকে অস্বাভাবিক স্প্রেড থাকা দুই বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকও আমানত সংগ্রহ করে কম সুদে; আর ঋণ বিতরণে আদায় করে বেশি সুদ হারে। ব্যাংকটির তুলনামূলক কম শাখা থাকলেও বিতরণ করা ঋণের পরিমান প্রায় ব্র্যাক ব্যাংকের সমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমান ১৭ হাজার ৭১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমান ৬০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। মোট ঋণের ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, ডাচ বাংলা বা ব্র্যাক  ব্যাংক যদি গুড উইলের কারণে কম সুদে আমানত আনে, সেটা তাদেরই কৃতিত্ব। ব্যাংকগুলোর সুনামের জন্য ৬ শতাংশের  নীচে সুদ হারে আমানত সংগ্রহ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোধ হয় কোনো করণীয় নাই। যদিও তারা সরকারের  কাছে থেকে ৬ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ ও ৯ শতাংশ হারে ঋণ বিতরন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ জন্য আমরা এসব ব্যাংকে পরিদর্শন করে বেশি সুদের ঋণ বিতরণের কারণ জানতে চেয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper