ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিদেশি প্রাইভেট ঋণ তথ্য নেই সিআইবিতে

অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে

জাফর আহমদ
🕐 ১০:১২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০১৮

বিদেশি প্রাইভেট ঋণের পরিমাণ বাড়লেও দেশে এসব ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদেশি এসব ঋণ গ্রাহকরা ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। দেশি সব ঋণে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) জমা দেয়। কিন্তু বিদেশি ঋণ নেওয়া সম্পর্কিত তথ্য সিআইবিতে দেওয়া হয় না। ফলে বিদেশি ঋণের সবার অজান্তেই এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।

বিষয়টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ঋণ গ্রাহক ও বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকির বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, বিদেশি ঋণ নেওয়া সম্পর্কিত তথ্য যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে জমা থাকে তাহলে এটা একটি স্বচ্ছ কাজ হয়। এর ফলে বিদেশিরা ঋণ দেওয়ার সময় এসব তথ্য জানার পর কোনো উদ্যোক্তাকে কম সুদে ঋণ দিতে পারে। সিআইবিতে তথ্য থাকলে দেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও নিশ্চিন্তে ঋণ দিতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি করে এমন প্রতিষ্ঠান ঋণ নিলে রপ্তানির আয় থেকে সে টাকা কেটে নেবে। তখন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া দেশি ব্যাংকের টাকা আটকে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন প্রান্তিকের তথ্যানুযায়ী, বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারি ঋণ ৪১ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণগুলো হলো- কারেন্সি অ্যান্ড ডিপোজিট; প্রাইভেট লোন; মানি মার্কেট ইনস্ট্রুমেন্ট, ট্রেড ও অন্য। এর মধ্যে কারেন্সি অ্যান্ড ডিপোজিট; মানি মার্কেট ইনস্ট্রুমেন্ট ও ট্রেড ঋণ স্ব স্ব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এবং এসব ঋণ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু প্রাইভেট লোন সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। এ ঋণ প্রাইভেট খাতের বিদেশি মোট ঋণের অধিকাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ ঋণ সরাসরি নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করছে। এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈদেশিক ঋণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাবে।

ব্যবসায়ীদের মতে, বিদেশি ঋণের তথ্য সিআইবিতে না থাকার বিষয়টি সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশি ঋণ গ্রহণ করে খেলাপি হওয়ার পর দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে আবার ঋণ নেওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণখেলাপি হয়ে পড়লে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে এ সম্পর্কিত তথ্য থাকে। ওই খেলাপি গ্রাহক পুনরায় অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার ভিত্তিতে নতুন ব্যাংক ঋণ দেয়। ওই গ্রাহক অন্য ব্যাংকে খেলাপি নয়-সিআইবির এ ধরনের প্রতিবেদন দিলে নতুন ব্যাংক ঋণ দেয়। খেলাপি হলে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও নির্দেশনা আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সম্পর্কিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি ঋণের এটি সব চেয়ে বড় নেতিবাচক দিক। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করার পর খেলাপি হয়ে পড়ল কিন্তু সিআইবিতে রিপোর্ট করার বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য থাকে না। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি বাহ্যিক ভালো বলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে রুগ্ন হয়ে পড়ল। যখন নতুন করে দেশের ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়বে ততক্ষণ এর নেতিবাচক প্রভাব ছাড়িয়ে পড়বে।

বিআইবিএমের গবেষণা মতে, এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী ঝুঁকি তৈরি করে। ঝুঁকিগুলো হলো- ফরেন কারেন্সি রিস্ক, মোরাল হ্যাজার্ড, কস্ট অব বোরোয়িং, ফরেন কারেন্সি বোরোয়িং লোকাল বিজনেস অর্গানাইজেশন, লোন ইউটিলাইজেশন, পলিসি আনসার্টিইনিটি, পলিসি সাপোর্ট, ভেরিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন, বোরোয়িং ফ্রম অফ শোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং ঋণ অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা।

 
Electronic Paper