ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যবসাবাণিজ্যে স্থবিরতার শঙ্কা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করছেন না। পুরনো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণে থাকছেন ব্যবসায়ীরা। আর দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্রেতারা আগামী নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি তিন মাসে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা জানতে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্রেতা কম সময়ের রপ্তানি উপযোগী ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতিকে সামনে এনে তারা এ ধরনের চিন্তা করছেন। ফলে আগামী তিন মাস ব্যবসা-বাণিজ্যে এক স্থবিরতা আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনের আগে-পরে কী হবে এ নিয়ে শঙ্কায় দেশের পুরো ব্যবসায়ী সমাজ। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের বক্তব্যে এমন হতাশার আভাস মিলেছে। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, উৎপাদন, বিপণন ও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা আনা নেওয়ার বন্ধ হয়ে যায়-এর ফলে অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়। আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারও ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় আছেন।        
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগ নিবন্ধনের জন্য চলতি মাসে ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর কিছুটা কমেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে নির্বাচনী উত্তেজনা বাড়লে আরও কিছুটা কমতে পারে। তবে গত পাঁচ বছর যেভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল, আশা করি দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে না; ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয় রাজনৈতিকরা এমন পথে যাবেন না। তবে ঐক্যফ্রন্ট কেন্দ্রিক রাজনৈতিক তোড়জোড়ে বিনিয়োগ নিবন্ধনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
নিট তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা নেতা মোহাম্মদ হাতেম খোলা কাগজকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি নতুন উচ্চতায় রূপান্তর হওয়ার  সময় চলছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ ও ইউরোপে সামার দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে এ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সব দেশের ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সম্ভাব্য অস্থিরতা এ সম্ভাবনাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ক্রেতা নভেম্বর-ডিসেম্বরে সম্ভাব্য রপ্তানি কীভাবে হবে তা জানতে চেয়েছেন। এ সময়ে কোনো সমস্যা হবে কিনা তা জানতে চেয়েছেন। এমনকি রাজনীতিকেন্দ্রিক অস্থিরতা জানুয়ারি মাসেও চলতে থাকবে কিনা তা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো কর্মকাণ্ড রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে নিশ্চয়তা দিলেও তারা বুঝতে চাইছেন না। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এক্ষেত্রে তাদের কিছু ক্রয়াদেশ কমবে।
প্রধান এ রপ্তানি খাতের সেপ্টেম্বর মাসের তথ্যে দেখা যায়, সূচক ঊর্ধ্বমুখী আছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ৯৯৪ কোটি (৯.৯৪ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৯৩৩ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৮৬৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সেপ্টেম্বরে বেশি রপ্তানি হয়েছে। চলতি মাসেও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আগামী মাস থেকে রপ্তানি কমতে পারে। তিনি বলেন, রপ্তানি ব্যাহত হয়, এমন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হোক রাজনীতিকরাও নিশ্চয়ই চাইবেন না।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে তিন মাসের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি গুনতে হয়েছে দেশকে। সে সময় ব্যবসায়ীদের অন্তত ১৬টি সংগঠন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে। কোনো সংগঠন বলেছিল, দিনে ক্ষতির পরিমাণ গড়ে দুই হাজার কোটি টাকা। একটি সংগঠন হিসাব আরও সুনির্দিষ্ট করে বলেছিল, দিনে গড়ে ক্ষতি দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। একই সময়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, হরতাল-অবরোধে ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের ক্ষতি হয়েছে এবং অনেক খাতের ক্ষতি অপরিমেয়। প্রকৃত হিসাব যাই হোক হরতাল-অবরোধকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতায় অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি গুনতে হয়। আর ব্যক্তিগত যে সব ব্যবসায়ী এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যান।  দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের এই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের প্রত্যাশা রাজনীতিকদের বোধোদ্বয় হবে। অর্থনীতির ক্ষতি হয় এমন কোনো কর্মসূচি দেবেন না। নিশ্চয়ই তারা ভালো বোঝেন, দেশের অর্থনীতির মঙ্গল চিন্তা করে ব্যবসা-বাণিজ্যকে রাজনীতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে রাখবেন। তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা এই ব্যবসায়ী নেতা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খুলতে ব্যাংকে ব্যবসায়ীদের আনাঘোনা কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে সঠিক তথ্য পেতে এ মাসের শেষাবধি অপেক্ষা করতে হবে। সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক শাখা সূত্রে একই খবর মিলেছে। আগামী নভেম্বর-জানুয়ারি মাসে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। সরকার বদল হলে মূলধনী যন্ত্র আমদানি স্বাভাবিক  হতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।   
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, দেশের মৌলিক ইস্যু নির্বাচনকেন্দ্রিক। এ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, ইভিএম কার্যকর না করার দাবিসহ নানা দাবি আছে। এসব দাবি না মানলে অনিশ্চয়তা আছে। সে কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি কি হবে বলা মুশকিল। যদি কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হয় তাহলে অর্থনীতির জন্য অনেক ক্ষতি হবে। বিগত বছরগুলোতে এমনিতেই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম হয়েছে। আবার যদি অনিশ্চয়তা তৈরি হয় তাহলে তা অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ হবে।

 
Electronic Paper