ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৩০০ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা

মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
🕐 ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২১

৩০০ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা

গত বছর থেকে করোনা ও বৃষ্টির কারণে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ থাকার পর কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আবারো শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ উৎপাদন আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত চলবে। এ সময়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কাজে ফিরেছেন বেকার হয়ে পড়া ৩৫ হাজারের অধিক শ্রমিক।

উৎপাদনের ফলে কক্সবাজার শুঁটকি দোকানগুলোতে ভরে উঠেছে নতুন শুঁটকি। প্রতিদিন শুঁটকি উৎপাদনকারীরা দোকানে দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের শুঁটকি। এতে উৎপাদনকারীদের মুখে অনেকটা হাসি ফুটেছে।

গত মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার পৌরসভার সমুদ্র্র উপকূলীয় এলাকা নাজিরারটেক, ফদনারডেইল, কুতুবদিয়াপাড়া ও সমিতিপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, সাগর তীরে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা শহরের দেশের বৃহৎ নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে হাজার হাজার শ্রমিক শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে কাজ করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রলার থেকে কাঁচা মাছ কাঁধে করে মহালে নিয়ে আসছে, আবার অনেকেই মাচায় করে রোদে শুকাচ্ছে। এ ছাড়াও অনেকেই রপ্তানির জন্য বস্তা ভরে প্রস্তুত করে রাখছে। এসময় কথা হয় নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহর সাথে।

তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে গত ১ জুলাই থেকে সব মহালে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ রাখার পর বৃষ্টি কমে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহ থেকে আবারো পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের এই বৃহৎ শুঁটকি মহালে দিন দিন উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবারে আরো অর্ধশত শুঁটকি ব্যবসায়ী বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে শ্রমিকের সংখ্যাও। গত বছর প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক থাকলেও এবারে তা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একইভাবে জেলার সাগরদ্বীপ সোনাদিয়ার মগচর এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, ৩৭টির বেশি মহালে (শুঁটকি তৈরির কারখানা) রোদে বিপুল পরিমাণ মাছ শুঁটকি করা হচ্ছে। এর মধ্যে লইট্যা ও ছুরি শুঁটকি বেশি। গভীর সাগর থেকে জেলেরা মাছ ধরে এখানে বিক্রি করছেন। মগচরের জেলে হামিদুল ইসলাম জানান, শুঁটকি উপযোগী মাছ ধরার জন্য ছোট ইঞ্জিনের ট্রলার রয়েছে পাঁচ শতাধিক। প্রতিদিন এসব ট্রলারে ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকার মাছ ধরা পড়ছে। শহরের শুঁটকি ব্যবসায়ী সব্বির আহমদ (৫০) বলেন, প্রতি সপ্তাহে তিনি নাজিরারটেক, ফদনারডেইল, ফিশারিঘাট, মগচিতাপাড়া থেকে ৪০০ মণের বেশি শুঁটকি কিনে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সরবরাহ দিচ্ছেন।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকের উল্লেখযোগ্য অংশ বাড়ি ফেরার সময় কয়েক কেজি করে শুঁটকি কিনে নেন। শহরের ছোট-বড় ছয় শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও পর্যটকের জন্য খাবারের সঙ্গে শুঁটকির ভর্তা রাখতে হচ্ছে।

শুঁটকির জোগান দিতে বহু ব্যবসায়ী টেকনাফ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়া খুলনার সুন্দরবন, নোয়াখালীর হাতিয়া, রাঙ্গাবালীসহ বিভিন্ন উপকূল থেকে এখানে শুঁটকি এনে চড়াা মূল্যে বিক্রি করছেন।

শুঁটকি মাছ রপ্তানিকারকগণ জানিয়েছেন জেলার ৩৭টি মহাল থেকে করোনার আগে হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় শুধু পোপা শুঁটকি রপ্তানি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করা হয়। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এ বছর শুঁটকি রপ্তানি থেকে ৩০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। পোপা শুঁটকি দিয়ে সুস্বাদু স্যুপ তৈরি হয়।

ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, ‘বর্তমানে মৌসুমের নতুন শুঁটকি হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। নতুন করে উৎপাদন শুরুর পর গত তিন দিনে ১০ মণ লইট্যা ও ছুরি শুঁটকি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সরবরাহ করেছি।’

শুঁটকি মহালের মালিক কামাল উদ্দিন জানান, তাঁর একটি মহালে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকার শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই চরের আরও ২৯টি মহালে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম পড়বে।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার প্রায় ছয় হাজার ট্রলার সাগরে গিয়ে কোরাল, লাক্ষ্যা, চাপা, কামিলা, হাঙর, রুপচাঁদা, পোপা, রাঙাচকি, মাইট্যা, কালো চাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উপকূলে শুঁটকি করা হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি রূপচাঁদা ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা, শুরমা ৮০০ থেকে ১৫০০, কোরাল এক হাজার থেকে ১৬০০, পোপা ৪০০ থেকে ১২০০, চিংড়ি এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০, লইট্যা ৪৫০ থেকে ৯০০, ছুরি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 
Electronic Paper