ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টেকনিক্যাল টেক্সটাইলে অনীহা

বিশ্বে এর পরিধি প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলারের * বাংলাদেশের ভালো কিছু করা সম্ভব * প্রচলিত পণ্যের বাইরে সাহস পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২১

টেকনিক্যাল টেক্সটাইলে অনীহা

সম্প্রতি একটি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের সামনে এখন টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের অবারিত সুযোগ। বিশ্বে এর পরিধি প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলারের। এ খাতে বাংলাদেশের ভালো কিছু করা সম্ভব। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পে প্রচলিত ধরনের কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে সেই সম্ভাবনার পথে দেশের উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম।

তবে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন যে পর্যায়ে রয়েছে শুরুতে এ অবস্থায় ছিল না। ধাপে ধাপে বর্তমানের অবস্থায় এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্প এখন মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সরকার এগিয়ে এলে এবং তৈরি পোশাক শিল্পে অর্জিত অভিজ্ঞতার সমন্বয় হলে টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের যে সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগানো সম্ভব।

টেকনিক্যাল টেক্সটাইল হলো মেডিকেল বা স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ক পোশাক। যা বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের সময়ে বাংলাদেশ কাজ শুরু হয়। যে সময় বিশ^জুড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, বিপণন, ভোগ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ থাকে উৎপাদন। তৈরি পোশাকের প্রচলিত ক্রেতারা কার্যাদেশ বন্ধ ও স্থগিত করে। তখন অনিশ্চয়তা পড়ে যায় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। এ সময় জীবন রক্ষাকারী পিপিই ও মাস্কের অর্ডারের সন্ধানে নামে দেশের উদ্যোক্তারা। এতে সফলও হয়।

করোনাকালীন যখন কার্যাদেশ স্থগিত বা প্রত্যাহারে উদ্যোক্তারা দিশেহারা তখন আশার আলো জাগায় এই বিশেষায়িত পোশাকের কার্যাদেশ। সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিপিই রপ্তানির মাধ্যমে সেই দরজা খুলে যায়। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬১৮ মিলিয়ন ডলারের মাস্কসহ পিপিই রপ্তানি করেছে বিশ্ববাজারে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি। অবশ্য অন্যান্য টেকনিক্যাল টেক্সটাইল পণ্য কী পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অন স্কেলিং আপ দ্য প্রোডাকশন অব টেকনিক্যাল টেক্সটাইল (টিটি) ইনক্লুডিং পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ এখনো টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই পণ্যের বড় ক্রেতা ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ। বিশ্বব্যাপী টেকনিক্যাল টেক্সটাইল বাজারের আকার এখন প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশের সামনে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই বাজার এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে।

মূলত, বাজারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, উচ্চ-কর্মক্ষম কাঁচামালের অভাব, কমপ্লায়েন্স ও সার্টিফিকেশন এবং মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা।

ধারণা করা হচ্ছে, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ২২৪.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যেখানে বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার হবে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। আবার এদিকে, বিশ্বব্যাপী পিপিই-এর বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ৯৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

এই বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অগ্রসর হচ্ছেন না কেন- এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিজিএমইএ-এর পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব। তিনি দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, এটা সম্ভব। তবে আমাদের সমস্যা অন্য জায়গায়। এর জন্য এডিশনাল টেকনোলজি, এডিশনাল বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর জন্য দরকার সরকারি বিশেষ সুবিধা। এটা স্পর্শকাতর প্রোডাক্ট।
এর উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে দরকার হবে বিশেষ টেস্টিং ল্যাব এবং বিশেষ ধরণের কাঁচামাল। এগুলোর জন্য দরকার উচ্চ বিনিয়োগ। সরকার এ জন্য ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রি ঘোষণা করতে পারে। একটি বিশেষ শিল্পাঞ্চল এ ধরনের প্রডাক্টের জন্য ঘোষণা করতে পারে। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। কর্মসংস্থান হবে বিপুল সংখ্যক মানুষের। এখন যে সব শিল্প কারখানা উৎপাদনে আছে তারা প্রচলিত কাজের বাইরে বিশেষ ধরনের প্রডাক্ট হলে এবং বড় বিনিয়োগ বেশি হলে সেখানে হিসাব নিকাশ করছে।

এক্ষেত্রে সরকার শিল্পাঞ্চল এবং ট্যাক্স ফ্রি ঘোষণা করলে এবং বিদেশি বিনিয়োগ এলে কিছুদিনের মধ্যে টেকনোলজি স্থানান্তর হবে। তারপর অল্পদিনেই স্থানীয়ভাবে বড় বিনিয়োগ হবে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতে ভালো করছে, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বিপুলসংখ্যক দক্ষ শ্রমিক রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা সহজেই এটা করতে পারবেন।

বিজিএমইএ পরিচালক বলেন, এটা আমরা পারবো। এটা রকেট সায়েন্স নয় যে কঠিন হবে। আবার রকেট সায়েন্স হলেও আমরা এটা পারব। সে আত্মবিশ্বাস আমাদের এখানকার উদ্যোক্তাদের আছে। আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের নীতি।

 
Electronic Paper