ভল্টে স্বর্ণ সংরক্ষণের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির আটক করা স্বর্ণসহ মূল্যবান ধাতু আটকের পর তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণে নতুন সুপারিশ আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণ নিয়ে ভুতুড়ে কাণ্ড তদন্তে গঠিত কমিটি এ সুপারিশ দিয়েছে। কমিটি তদন্ত চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের কাছে জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর, পুলিশ বা সরকারের অন্য কোনো এজেন্সি স্বর্ণ বা কোনো মূল্যবান ধাতু আটক করার পর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট বক্সে করে সিলগালা করে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখবে। এবং এ স্বর্ণ বা মূলবান ধাতু সম্পর্কিত বিরোধ বা মামলা মীমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত একই বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে থাকবে। মীমাংসা হওয়ার পর আবার উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ওই স্বর্ণ নিলাম, ফেরত বা বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রয় করে রিজার্ভ হিসাবে সংরক্ষণ করবে। প্রচলিত নিয়মে সরকারের কোনো এজেন্সি স্বর্ণ বা মূল্যবান ধাতু আটক করার পর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করে। ভল্টে জমা রাখার সময় পণ্যের তালিকা তৈরি করে, এমনকি স্বর্ণ মান পরীক্ষা না করে মানের উল্লেখ করে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র নিয়ে যায় ওই এজেন্সিগুলো। পরে ওই এজেন্সি ভিন্ন রকম দাবি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিপদে পড়ে। যেহেতু স্বর্ণের ঘনত্ব ভেদে বিশুদ্ধতা মাপার যন্ত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি। সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণের মান অবনতির অভিযোগ ও এ থেকে পরিত্রাণ পেতে এ সুপারিশ করেছে কমিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একটি সূত্র জানায়, স্বর্ণ নিয়ে তদন্ত কাজ চলার কারণে পরবর্তী সময়ে আটককৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংক জমা রাখতে পারছে না। স্বর্ণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আবারও যাতে বিব্রতকর অবস্থায় না পড়ে সে জন্য এ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চাচ্ছে আটক স্বর্ণ ভল্টে জমা রাখা নিয়ে একটি নীতি হোক তারপর সে স্বর্ণ জমা রাখবে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড়শ কেজি স্বর্ণ ফিরিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ভল্টে সংরক্ষিত স্বর্ণ নিয়ে গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সাধারণ মানুষের মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া অবৈধ স্বর্ণ জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ জমাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বর্ণের নিরাপত্তায় সিলগালা করতে পারবে। সিলগালা দিয়ে আটকে দেওয়া বা দস্তখত দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো রাখতে পারবে। বক্স বা থলের মধ্যে থাকা বস্তুর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো দায়-দায়িত্ব নেবে না। এর ভেতরে কি আছে তাও ব্যাংক দেখতেও চাইবে না। বাংলাদেশে ব্যাংক তাদের কাছ থেকে সিলগালাকৃত একটি প্যাকেট বুঝে পেয়েছে বলে জানিয়ে দেবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের পর নীতিমালা চূড়ান্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দুই বছরের বেশি সময় আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণ সংরক্ষণ নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) স্বর্ণ পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ স্বর্ণ (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা স্বর্ণের চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো স্বর্ণের নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রণে তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর যেভাবে স্বর্ণ রেখেছিল সেভাবেই আছে। স্বর্ণে ভেজাল মেশানোর কোনো সুযোগ নেই। যেমন স্বর্ণ রাখা হয়েছিল, কেমনই আছে। স্বর্ণের মান নির্ণয় পদ্ধতির ত্রুটি ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন হয়েছে। এ সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদনেও এ ধরনের সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।