ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিলস-এর গবেষণা

বিদেশফেরত নারী শ্রমিকেরা সামাজিকভাবে অবহেলার শিকার

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ৫:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১

বিদেশফেরত নারী শ্রমিকেরা সামাজিকভাবে অবহেলার শিকার

বিদেশ থেকে ফেরত আসা নারী শ্রমিকের অধিকাংশ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন। তারা একদিকে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা পাননি, অন্যদিকে পরিবার ও সামাজিকভাবে উপেক্ষিতও হচ্ছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস (বিলস)-এর ‘দেশে ফিরে আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিলস সেমিনার হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিলস গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিলস নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাকিল আখতার চৌধুরী, মো. আব্দুল ওয়াহেদ এবং পূলক রঞ্জন ধর, বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, উপ-পরিচালক এম এ মজিদ প্রমুখ।

পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিদেশ গিয়ে প্রায় ৪১ ভাগ নারী শ্রমিক এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশে ফিরে এসেছেন। ৫৫ ভাগ নারী শ্রমিকের দেশে ফেরত আসা ছিল জবরদস্তিমূলক। বিলস দেশের তিনটি জেলা চট্টগ্রাম, যশোর এবং ফরিদপুরের ৩২৩ জন প্রত্যাবাসী অভিবাসী নারী শ্রমিকের ওপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করলে এ তথ্য উঠে আসে।

গবেষণা দেখা যায়, দেশে ফেরত আসা এক তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিকের অর্থিক অবস্থা আগের থেকে অবনতি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সিংহভাগই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৮৫ ভাগ তাদের বর্তমান কাজ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত এবং ৫৭ ভাগ তাদের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তিত।

বিদেশ থেকে ফেরত আসা এসব নারী শ্রমিকের মধ্যে ৫২ ভাগ বিদেশে জবরদস্তিমূলক শ্রমের শিকার হয়েছেন, ৬১ ভাগ বিদেশে খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগেছেন, ৭ ভাগ নারী শ্রমিক যৌন এবং ৩৮ ভাগ নারী শ্রমিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিদেশ ফেরত ৬০ ভাগ নারী শ্রমিক বেকার, ৬৫ ভাগ শ্রমিকের নিয়মিত মাসিক কোনো আয় নেই, ৬১ ভাগ শ্রমিক এখনও ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন, ৭৫ ভাগ শ্রমিকের কোনো সঞ্চয় নেই এবং ৭৩ ভাগ শ্রমিক তাদের পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।

বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা নাজুক। ৫৫ ভাগ ভাগ শ্রমিক শারীরিকভাবে অসুস্থ, ২৯ ভাগ শ্রমিকের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে এবং ৮৭ ভাগ শ্রমিক মানসিক অসুস্থতার কোনো চিকিৎসা পাননি। বিদেশফেরত নারী শ্রমিকরা সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। পরিবার ও সমাজ তাদের সাথে বৈরী এবং অমানবিক আচরণ করে।

৩৮ ভাগ নারী শ্রমিক বলছেন, সমাজে তাদের নিম্ন শ্রেণির চরিত্রহীন নারী বলে গণ্য করা হয়।

বিদেশফেরত এ নারী শ্রমিকদের উন্নয়নে বিলস-এর গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। প্রত্যাবাসী নারী শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত সামজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা; উপযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া; সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি উপযুক্ত বাণিজ্যিক পরামর্শ দেওয়া; মনো-সামাজিক পরামর্শসহ উপযুক্ত স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান; পদ্ধতিগত নিবন্ধন এবং তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া; উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন, যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; সংগঠন, নিবন্ধন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় ট্রেড ইউনিয়নকে সম্পৃক্ত করা এবং ক্রমান্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতি-কাঠামো প্রণয়নে উদ্যোগী হওয়া। তাছাড়া নীতি ও আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

 
Electronic Paper