ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ই-কমার্স ঘিরে ফের তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

ই-কমার্স ঘিরে ফের তোলপাড়

আর্থিক অনিয়ম ও ভোক্তা ঠকানোর অভিযোগে আলোচিত নয়টি ই-কমার্স কোম্পানির হিসাব খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো দায়িত্ব না নিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বিষয়টি হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলেও জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও কমিটির প্রধান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। হাফিজুর রহমান একই সঙ্গে ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান।

দেশে ই-কমার্সের ব্যবসা বেশ কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল, এর মধ্যে মহামারী শুরু হলে নতুন নতুন বেশ কিছু কোম্পানি রাতারাতি ফুলে-ফেঁপে উঠতে শুরু করে। বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এসব কোম্পানি লাখ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে এখন। অনেকে অর্ধেক দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকার অর্ডার করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, কোম্পানি তাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এসব ঘটনায় ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে সম্প্রতি। গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে প্রতারণা মামলা হওয়ার পর ই-অরেঞ্জের মালিকদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি ও আলেশা মার্টের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে জানতে গত আগস্টের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন তারা এসব প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়ে ব্যবসার হিসাব বের করার পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

‘ব্যবসার বিস্তারিত তথ্য জানতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রসঙ্গটি এসেছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি,’ বলেন হাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। মন্ত্রণালয়কে বলেছি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা বুঝতে হলে তৃতীয় কোন পক্ষকে দিয়ে অডিট করাতে হবে।’

১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ
ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, সভায় ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্সের বিষয় উঠে এসেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু ইতিমধ্যে আইন অমান্য করেছে, সুতরাং মিনিস্ট্রি সরাসরি কোনো দায়িত্ব না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেফার করে দেবে তারা যাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটা হলো কমিটির সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত।’ এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলেও জানান হাফিজুর রহমান।

মহাপরিচালক বলেন, ‘আরও দু-একটির (ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে ছোটখাটো সিদ্ধান্ত আছে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে কমিটির সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করবো। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে আমরা এক্ষেত্রে আরও কিছু করতে পারবো কিনা সরাসরি। এর আগেও আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। তারা কিছুটা কাজ করলে অলরেডি আমরা যতটা জানি। আজও সিদ্ধান্ত হয়েছে এটা তাদের হাতেই দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক একটা রিকোয়েস্ট করেছিল যে, স্বাধীন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে এই কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করা যায় কিনা। কিন্তু এটার একটা আইনগত সমস্যা আছে। মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো কোম্পানির অডিট করতে পারবে কিনা? সেটা আমরা যাচাই করে দেখছি, আইনগতভাবে আমরা সেটা পারি কিনা। আমরা যদি আইনগত মতামত পাই তবে আমরা তৃতীয় পক্ষের অডিটর দিয়ে অডিট করাবো।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা মামলা লাগে। এক্ষেত্রে সেই রকম কিছু হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলা করলে করবেন ভোক্তা কিংবা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে তথ্য পেয়েছি, ওখানে আমাদের একটা গ্যাপ পরিলক্ষিত হয়েছে, তার দায় ও সম্পদের মধ্যে বড় যে পার্থক্য সেটা কোথায় গেছে? এছাড়া গ্রাহকের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে, বিনিময়ে যে পণ্য না দিয়ে গ্রাহককে প্রতারণা করেছে। এই বিষয়গুলো ওখানে আসে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-ভ্যালি কিংবা অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কিনাÑ জানতে চাইলে ই-কমার্স সেলের প্রধান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি বাদী হয়ে মামলা করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে যেমন একটা চিঠি দিয়েছিল ফ্যাক্ট উল্লেখ করে, আমরা এবারও সেভাবে চিঠি দেবো।’

এত কিছুর পর গ্রাহকদের স্বার্থ আপনারা রক্ষা করতে পারবেন কিনা- এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এটা পুরোপরি নিশ্চয়তা দিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। সরকার জনগণের জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখানে আমরা ই-ভ্যালির প্রতিও কোনো মায়া দেখাচ্ছি না, এমনকি মার্চেন্টের প্রতি যে খুব আগ্রহ তাও না, ক্রেতাদের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি। সে যেন প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা পায়, অনেক ক্রেতা আছেন না বুঝেই যুক্ত হয়ে গেছেন। আমরা চাই তারা এখান থেকে সেফলি বের হোক। তার পণ্যটা বুঝে পাবো। মার্চেন্টরাও তাদের পাওনাটা বুঝে পায় সেটাই আলটিমেট টার্গেট কিন্তু আমি এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারব না। এটা ফাইনালি নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা। টাকার ব্যবস্থা না হলে এটা সম্ভব না। টাকাটা সে নষ্ট করে থাকলে, অন্যত্র পাচার করে, সেটা যদি উদ্ধার করা না যায় তাহলে ডিফিকাল্ট হচ্ছে।’

 
Electronic Paper