ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উদ্বিগ্ন অর্ধকোটি শিল্প শ্রমিক

দুই ধরনের ছুটি ঘোষণায় সংকট, ঈদে বাড়ি গিয়ে আটকে গেছেন অনেকে

জাফর আহমদ
🕐 ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২১

উদ্বিগ্ন অর্ধকোটি শিল্প শ্রমিক

আবারও কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউন ২৩ জুলাই থেকে শুরু হলো, চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউনকালীন শিল্প কারখানা, মার্কেট, গণপরিরহন বন্ধ। শুধু খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ও ওষুধ-চিকিৎস্যার মতো জরুরি সেবা চালু থাকবে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের অধিকাংশ মালিক তাদের শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছেন ২৮ জুলাই বা ১ আগস্ট কারখানা খুলবে। বাকিদের যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে সময় মতো কারখানা খুলবে। এদিকে সরকার ও মালিকের এই দুই ধরনের ঘোষণায় সংকটে পড়েছেন শ্রমিকরা। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ায় সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

করোনা মহামারীতে প্রতিদিন মৃত্য ২০০ ছাড়িয়ে যাওয়া এবং আক্রান্ত ১৩ হাজার অতিক্রম করায় এক নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই মৃত্যু-আক্রান্ত আস্তে আস্তে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দুই সপ্তাহ লকডাউন দেওয়ার পরও সুফল মিলছে না। বরং আরও বেড়েছে। এ সময়ে তৈরি পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্প কারখানা চলেছে। প্রশ্ন উঠেছে তৈরি পোশাক কারখানার মতো শ্রমঘন শিল্প খোলা রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কিনা। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলে কৃষকদের গবাদি পশু বিক্রি ও পরিবহন এবং কোরবানি দিতে লকডাউন তিন দিনের জন্য শিথিল করা হয়। এ সময় শিল্প কারখানার শ্রমিকসহ অর্ধ কোটি শ্রমজীবী মানুষ ঢাকা ছাড়ে।

অন্য লকডাউনের সময় শিল্প-কারখানা বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য কারখানা খোলা থাকে। লকডাউন ঘোষণার পর ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের কাছে আবেদন করলেই শিল্প কারখানাকে লকডাউনের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের লকডাউনে হলো ভিন্নটা। উদ্যোক্তারা মনে করেছিলেন এবারও আবেদন করলে তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। এমনটা ধরেই ঈদের আগের দিন পর্যন্ত উদ্যোক্তা সমিতিগুলো উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেছিল সরকার কারখানা খোলার রাখার অনুমতি দেবে।

১৭ জুলাই বিকেএমইএএর সিনিয়র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম খোলা কাগজকে জোর দিয়ে বলেন, আজ সন্ধ্যার মধ্যে ক্যাবিনেট সচিব রপ্তানিমুখি শিল্প খোলার রাখার ব্যাপারে অনুমতি দিয়ে ঘোষণা দিতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে খবর আসে কঠোর লডাউনে কোনো শিল্প কারখানা চলবে না। খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী কারখানা বা খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবা ছাড়া সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে কারখানা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে কোনো কারখানা ২৭ জুলাই, কোনো কারখানা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। কিছু কিছু কারখানা চালুর ব্যাপারে কোনো তারিখই ঘোষণা করেনি। তারা শ্রমিকদের ফোনে যোগাযোগ রাখতে বলে।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আগের ঘোষণা আবারও পুনরাবৃত্তি করেন। অধিকাংশ কারখানা ২৭ জুলাই বা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করলেও নির্দিষ্ট তারিখের পরদিন কারখানা খোলার জন্য এই ঘোষণা দেননি বলে মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি খোলা কাজকে বলেন, কোনো কারখানা ২৭ বা ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করলেও প্রয়োজনে আবার ছুটি বাড়াবে। সরকারের অনুমতির বাইরে শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা চালাবে না।

তিনি এও বলেন, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখলে শিল্পের ক্ষতি হবে। আমাদের এখানে অর্ডার আসছিল এবং গত এক বছরে আমরা আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলাম; আমরা চেষ্টা করছিলাম যেটা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এ অবস্থার মধ্যে আর একটি বাঁধার সম্মুখীন হবো। এরপর যে কী হবে, কতদিন লকডাউন থাকবে কেউ বলতে পারছে না। তবে এজন্য শুধু আমাদের ক্ষতি হবে তা নয়, ক্ষতি হবে আমাদের দেশেরও। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ কেউ মাস্ক পরবে না, স্বাস্থ্যবিধি মানবে না, তার জন্য পুরো দেশ লকডাউন দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ রাখলে তো আমরা উপকৃত হবো না। অর্থনীতি তখন সাফার করবে। অথনীতি সাফার করলে তো কোনো জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমি মনে করি রপ্তানমুখি শিল্পকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হোক। কারণ আমি ডিসিপ্লিন ওয়ার্কফোর্স (গার্মেন্টস শ্রমিক) নিয়ে কাজ করছি। দুই সপ্তাহব্যাপী ছুটি পেলে এই ডিসিপ্লিনটা নষ্ট হয়ে যাবে। এটা করা আমাদের বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তারপরও ফাইনালি সিদ্ধান্ত সরকারের। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তার সাথে একমত।

কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে দুই ধরনের বক্তব্য আসার কারণে শ্রমিকদের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যারা গ্রামে চলে গেছে তারা যানবাহন বন্ধ থাকার কারণে আটকে পড়েছে, কখন কারখানা খুলবে, কখন ঢাকায় আসবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। অন্যদিকে যারা শহরে আছে তারাও বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। গত বছর করোনার মধ্যে উদ্যোক্তাদের পরিনামদর্শী ঘোষণার পর যানবাহন বন্ধের মধ্যে পায়ে হেটে গ্রাম থেকে রওনা দেন শ্রমিকরা। মালিকের কথা না শুনলে চাকরি চলে যাবে-এ ঘটনা তাদের তাড়া করে ফিরে। এবারও তারা একই ভয়ে আছে।

এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ খোলা কাগজকে বলেন, গার্মেন্টস মালিকদের কথা না মানার মনোভাব থেকে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকার মালিককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এটা একটি সংকট। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সরকারের সুনির্দষ্ট বক্তব্য যদি মালিকদের কার্যকর করাতে না পারে তবে শ্রমিকরা বিপদে পড়বে। তিনি বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়ে লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকবে, একটিই কথা কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। এটা মালিককে জানাতে হবে।

 
Electronic Paper