ঈদ না আসতেই সিন্ডিকেট
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১
কোরবানির ঈদের বাকি সাত দিন। এরই মধ্যে বাজার যেন সিন্ডিকেটের দখলে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে পশুর চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের দাম। কিছুদিন আগের মূল্য হিসেবে বস্তাপ্রতি বেড়েছে দেড়শ’ টাকা। এদিকে লাফিয়ে বাড়ছে আদা-রসুনের মূল্য। গরম মসলার দাম স্থিতিশীল থাকলেও বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- চাহিদার তুলনায় দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সিন্ডিকেট করে যারা দাম বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি লবণ মৌসুমে লবণ মাঠে ১৬ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড লবণ উৎপাদন হয়েছে। চলতি লবণ মৌসুমে নতুন লবণ আসার আগ পর্যন্ত পুরাতন লবণের মজুদ ছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার মে. টন। সব মিলিয়ে মোট লবণের পরিমাণ ১৯ লাখ ৯৯ হাজার মে. টন। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মাঠ ও মিল পর্যায়ে লবণের মোট মজুদ ছিল ১১ লাখ ৪৫ কোটি মে. টন (লবণ মাঠে ৯ লাখ ৬০ হাজার মে. টন এবং মিলে লবণ ১ লাখ ৮৫ হাজার মে. টন)। এ ছাড়াও, দেশের বিভিন্ন জেলায়, উপজেলায় অবস্থিত ডিলার, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে।
৫৫০ টাকার লবণ ৭০০ টাকা
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে পশুর চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের দাম। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হতো ৫৫০ টাকায়, কয়েক দফা বেড়ে এখন ওই বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবারই সংকটের কথা বলে একটি অসাধু চক্র কোরবানির আগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তারাই দাম বাড়াচ্ছে। পাইকার ও আড়ৎদারদের দাবি সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম সামান্য বেড়েছে।
কাঁচাচামড়া সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির আগে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে। আবার অনেকে ব্যয় কমাতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম লবণ ব্যবহার করবে। এতে করে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
লাফিয়ে বাড়ছে আদা-রসুনের দাম
ঈদ সামনে রেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আদা ও রসুনের দাম। মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে মসলার বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। তবে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা কাটছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে গরম মসলা যে পরিমাণ বিক্রি হয়, কোরবানির ঈদের আগের এক মাস তার থেকে ২০-৩০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার ঈদকেন্দ্রিক কোনো বিক্রি নেই। এমনকি স্বাভাবিক সময়ে যে মসলা বিক্রি হয়, এখন বিক্রি তার ২০-৩০ শতাংশ মতো আছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি ৭০ শতাংশের মতো কমে গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে চীনা আদার দাম কেজিতে ৬০ টাকা এবং রসুনের দাম ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে চীনা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। আর চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এই রসুনের দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে।
লবণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
পুরান ঢাকার পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান বলেন, ‘সারা বছরে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, তার ৫০ শতাংশই আসে কোরবানিতে। প্রতি বছর দেখা যায়, কোরবানি সামনে রেখে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। এবারও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লবণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগে যে লবণের বস্তা ছিল ৫৫০ টাকা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।’
পুরান ঢাকার লালবাগে লবণের খুচরা ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, কোরবানির পশু চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত আয়োডিনবিহীন মোটা লবণের প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) এখন ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি, যা ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ছিল ৫৫০ টাকা। পাইকারি ও আড়ৎদাররা দাম বেশি নিচ্ছে তাই আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ লবণ গবাদিপশুকে খাওয়ানোর ও ডাইং কারখানায়ও ব্যবহৃত হয়।
লবণ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
লবণের দাম বাড়ার বিষয়ে পূবালী সল্টের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, চাষিরা মোটা লবণের কাঁচামালের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া সরবরাহ কম ছিল। এ কারণে কোরবানির পশু চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত মোটা লবণের দাম প্রতি কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে। এক বস্তায় ৭৫ কেজি থাকে অর্থাৎ প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা।
আদা-মসলা ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
চীনা আদা ও রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলী নূর বলেন, ‘এখন চীনা আদা ও রসুনের আমদানি কম। দেশি আদা-রসুন বাজারে কম রয়েছে। আবার সামনে ঈদ হওয়ার কারণে সম্প্রতি কিছু ক্রেতা আদা-রসুন বাড়তি পরিমাণে কিনেছেন। এ সবকিছু মিলেই আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। ঈদের আগে আদা-রসুনের দাম কমার সম্ভাবনা কম। বরং পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।’
পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সাধারণত কোরবানির ঈদের আগে আমাদের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেশি হয়। কিন্তু এবার বাড়েনি।
বিসিকের চেয়ারম্যানের ভাষ্য
অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে কোরবানির আগে লবণের দাম বাড়াচ্ছে জানিয়ে বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান বলেন, একটি অসাধু চক্র বেশি মুনাফার লোভে কোরবানির আগে দাম বাড়াচ্ছে। যার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ দেশে এখন চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। আমরা মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন দাম বাড়বে না। তারপরও যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।