করোনায় ছাড়ের পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে ৬৩৫১ কোটি
জাফর আহমদ
🕐 ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২১
দেশব্যাপী করোনা মহামারী চলছে। অর্থনীতি চাপে। উৎপাদন বিপণন বিঘ্নিত। আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি মন্দা। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে ঋণের কিস্তি বিতরণ ঐচ্ছিক করা হয়েছে। কোনো গ্রাহক ঋণের কিস্তির টাকা দিতে পারলে দেবে, না দিতে পারলে খেলাপি হবে না। এ বিশেষ সুবিধার মধ্যেও তিন মাসের ব্যবধানে ছয় হাজার ৩৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি করোনার প্রভাব বলে মনে করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি মনে করেন, জুন মাসের পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১ সালের মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ সময়ে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খেলাপি বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ।
চলতি ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বা ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এবং মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ; যা টাকার অঙ্কে ২ হাজার ৪৫৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৫৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৪ হাজার ৮৬ কোটি ২ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।
করানো মহামারীর মধ্যে ঋণের গ্রাহকরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করছে। ঋণের কিস্তি না দিলেও তারা খেলাপি হবে না। কিন্তু তারপরও তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে-এ ব্যাপারে সদুত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঋণ আদায় এক ধরনের বন্ধ, ঋণের কিস্তি দিলে দেবে, না দিলে খেলাপি হবে না। তারপরও খেলাপি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে মামলাধীন ঋণ। কোনো ঋণের টাকা আদায়ে মামলা চলমান থাকলে করোনাকালীন সুবিধা পাবে না, খেলাপি হবে। এ কারণে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
করোনা মহামারীর কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর চলতি বছরের মার্চ সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় ঋণের কিস্তি দিতে হবে। তবে না দিলে খেলাপি হবে না। মার্চ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ধেয়ে এলো আবারও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। আগের কিস্তির টাকা যারা দেয়নি তাদের বাকি কিস্তি পরিশোধের জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণের বকেয়া কিস্তি পরিশোধের জন্য কোনো বাড়তি টাকা গুনতে হবে না বা কোনো কমিশন দিতে হবে না। এর ফলে গ্রাহকরা বিশেষ সুবিধা পায়। জুন মাস থেকে এ সুযোগ উঠে গেলে খেলাপি ঋণ বাড়বে। ব্যাংকিং খাতে তখন করোনার প্রভাব পড়বে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেখাচ্ছে তার কোথাও সমস্যা আছে বলে মনে করছে অর্থনীতি বিদরা। প্রকৃত চিত্র খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি আছে।