ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ক্ষোভে ফুঁসছেন পোশাককর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, মে ০৮, ২০২১

ক্ষোভে ফুঁসছেন পোশাককর্মীরা

পোশাক শিল্পে ২০ রোজার মধ্যে বেতন দিতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি মানা তো দূরে থাকুক ঈদের এক সপ্তাহ আগেও পাওনা মিটাননি মালিকরা। এমনকি এখনও মার্চের বেতন পাননি অন্তত ৫০০ পোশাক কারখানার শ্রমিক। এছাড়া গত ছয় মাসে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এতে দেশের রপ্তানি আয়ের বড় খাত পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের শঙ্কা, ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

বেতন হয়নি বেশিরভাগ শ্রমিকের
৪০-৪৫ ভাগ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বোনাস হয়েছে। আবার অনেকে শুধু বেতন পেয়েছেন। বেতন-বোনাস দিয়েছে এ রকম কারখানার সংখ্যা পাঁচ শতাংশ। শিল্প পুলিশ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ মের মধ্যে সদস্যভুক্ত সব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের চেষ্টা চলছে। ঈদের আগেই সব কারখানা শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হবে। এখন পর্যন্ত নয় শতাধিক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ।

আশুলিয়া-সাভার এলাকার মোট ১ হাজার ৩২১টি কারখানার মধ্যে ১৪১টি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৫৫, বিকেএমইএর ১৭ ও বিটিএমএ পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা আটটি এবং অন্যান্য ৪৫টি কারখানায় বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামকে শ্রমঘন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা তদারকির দায়িত্বে রয়েছে শিল্প পুলিশ।

সংস্থাটির তথ্য মতে, এসব এলাকায় বস্ত্র, তৈরি পোশাকসহ মোট ৭ হাজার ৯৮২টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাসহ অন্তত পাঁচশ কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে এপ্রিল মাসের বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে দুই শতাধিক কারখানা রয়েছে। যেখানে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। এছাড়াও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্যভুক্ত ১৫টি এবং অন্যান্য খাতের ৫০টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

আশুলিয়া-সাভার এলাকার মোট ১ হাজার ৩২১টি কারখানার মধ্যে ১৪১টি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৫৫, বিকেএমইএর ১৭ ও বিটিএমএর পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা আটটি এবং অন্যান্য ৪৫টি কারখানায় বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঈদের আগে নারায়ণগঞ্জের ৬০টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে জটিলতায় পড়তে পারে। এর মধ্যে বিজিএমইএর ১০, বিকেএমইএর ২৫, বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে পাঁচটি। এছাড়াও অন্যান্য কারখানা রয়েছে ১৭টি।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৯ শতাধিক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়েছে। যা পরিমাণে ৬০ শতাংশের বেশি। বাকি কারখানাগুলোও সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন বোনাস পরিশোধ করবে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও ঈদের বোনাস দিয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা উচিত। সাধারণত গার্মেন্টগুলো শ্রমিকদের বেতন দেয় মাসের ৮ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। সেই হিসেবে এবারের ঈদ অত্যন্ত সুন্দর সময়ে হচ্ছে। তাই বেতন বোনাস নিয়ে বাড়তি ঝামেলা হওয়া উচিত হবে না।

তবে শ্রমিকদের কথার সঙ্গে একমত নন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি বলেন, আমরা মাসের শুরু থেকেই বেতন বোনাস দিচ্ছি। গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৯ শতাধিক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়েছে। যা পরিমাণে ৬০ শতাংশের বেশি। বাকি কারখানাগুলোও সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন বোনাস পরিশোধ করবে।

বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিচ্ছি। সবাই যাতে দ্রুত পরিশোধ করে এ জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে।

গাজীপুরে ছয় মাসে ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই
শিল্পপুলিশের তথ্য মতে, গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় গত ছয় মাসে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা সঙ্কটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ।

অন্যদিকে বেকার হয়ে জীবনযুদ্ধে টিকতে না পেরে পেশা পাল্টাচ্ছেন অনেক শ্রমিক। কারখানায় নতুন করে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে কেউ সবজি বিক্রেতা, কেউ ফেরিওয়ালা বা ভ্রাম্যমাণ দোকানের পসরা সাজিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই বলে আমরা চাকরিচ্যুতিকে সমর্থন করি না।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ সুপার ছিদ্দিকুর রহমান জানান, জেলায় দুই হাজার ৭২টি বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এ সব কারখানায় ১৫ লাখ আট হাজার ৪০৪ জন শ্রমিক কর্মরত আছেন। গত ছয় মাসে এ সব কারখানা থেকে ১০ হাজার ৭৩৬ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। বিভিন্ন সঙ্কটের কারণে চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত এই ছাঁটাইগুলো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে করোনা মহামারির মধ্যে।’

তিনি জানান, গাজীপুরে বিজিএমইএর ৮৩০টি, বিকেএমইএর ১৩৮টি, বিটিএমইএর ১২২টি ও অন্যান্য সংগঠনের আরও ৯৮২টি কারখানা রয়েছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্য মতে, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে জয়দেবপুর এলাকার এলিগেন্স গ্রুপের ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশনের দুই হাজার এবং তানাজ ফ্যাশনের ১২০০ শ্রমিক উল্লেখযোগ্য।

একটি কারখানা থেকে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক জিল্লুর হোসেন জানান, তিনি ১২ বছর ধরে ওই কারখানায় চাকরি করছেন। কোনো অভিযোগ না থাকার পরও গত ১ জুন বেতন না দিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ কারখানা থেকে তার মতো আরও অর্ধশত শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

এক সময় কারখানা শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও এখন ভ্যানে সবজি বিক্রি করে জীবন চালান আবদুল হালিম।

আন্দোলনের সতর্কবার্তা শ্রমিক সংগঠনগুলোর
ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ না করলে আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটবে বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা। তাই দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখা।

গতকাল শুক্রবার (৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার করোনা মহামারিতে দেশের শ্রমিকদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে মালিকদের স্বার্থে শিল্প-কারখানা চালু রেখেছে। অথচ তাদের ঠিকমতো বেতন-বোনাস দেওয়া হয় না। এর মধ্যে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম সম্পর্কিত ধারা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের ওপর কাজের চাপ সৃষ্টি করে উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে তৎপরতা চালাচ্ছে। আসন্ন ঈদের পূর্বে বেতন-বোনাস পাওয়ার অনিশ্চয়তা শ্রমিকদের এতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছে যে, যেকোনো সময় আন্দোলনের একটা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রাজু আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মানস নন্দী, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য তসলিমা আকতার বিউটি, সংগঠনের ঢাকা নগর শাখার সদস্য ভজন বিশ্বাস। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত।

গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিক ছাঁটাই অমানবিক। কিন্তু মহামারীর কারণে শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য জোরদার আন্দোলন করতে পারছেন না। এই সুযোগে মালিকরা নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন, যা খুবই উদ্বেগজনক।

 
Electronic Paper