করোনা প্রতিরোধে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি
জাফর আহমদ
🕐 ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ, মে ০৫, ২০২১
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আগামী (২০২১-২২) বাজেটে বড় ধরনের কার্যকর বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শিক্ষা দিয়েছেÑঅস্থায়ী কোনো কার্যক্রম দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন স্থায়ী হাসপাতাল। দরকার বড় ধরনের বাজেট। যাতে বর্তমানে মোকাবিলা ও আগামীতে করোনা রোধে চিকিৎসা সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন এবং রপ্তানির সুযোগ হয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘করোনা রোধে তিন ধরনের উদ্যোগ সামনে রাখতে হবে। আগামী বাজেটে কমপক্ষে ১৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাকে দুর্যোগের পাশাপাশি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সুচিন্তিত পদক্ষেপ ও দেশপ্রেমিক উদ্যোগ নিতে হবে।’
এদিকে টিকার সরবরাহ না থাকায় প্রথম ডোজ বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ এই মহামারীকে রোধ করতে টিকা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন। শুরুতে টিকা পাওয়ার জন্য শুধু ভারতের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প উৎস থেকেও টিকা নিশ্চিত রাখার দরকার ছিল, সেটা করা হয়নি। বিকল্প উৎস নিশ্চিত থাকলে এই টিকা বন্ধ রাখতে হতো না। টিকা চালু থাকলে করোনা রোধে মনোবল ও পথ্যÑদুইই কাজ করত।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, টিকা কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে। যাতে ২০ লাখ করে টিকা দেওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য টিকা পাওয়া ও সংগ্রহের জন্য বাজেটে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্র্থবছরে বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ২২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। জরুরি প্রয়োজন ১০ হাজার কোটি টাকা থোক রাখা আছে। আগের বছর বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এবার বাজেট প্রণয়নে টিকা সংগ্রহ, বিতরণ ও হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে হবে। করোনা চলে যাবে বা সর্দি-কাশির মতো সাধারণ রোগে পরিণত হবে। তারপরও কোভিড-১৯ চিকিৎসার হাসপাতালগুলো থেকে যাবে। তারপরও ঢাকা, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা চলে গেলেও হাসপালগুলো থেকে যাবে। এ থেকে দেশের গরিব সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে। তবে এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, এমনভাবে নিয়োগ দিতে হবে যাতে করোনা চলে গেলেও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়। তখন গরিব মানুষ সেবা পাবে।
অন্যদিকে দেশেই টিকা তৈরির সক্ষমতা ছিল। সংশ্লিষ্ট রোগের নির্মূল হওয়ার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। টিকার পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ফর্মুলা নেওয়া সম্ভব হলে বাংলাদেশে টিকার কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে টিকা তৈরিতে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান যেমন সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, বাংলাদেশের টিকা তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্যও সে ধরনের সহায়তার হাত নিয়ে কেউ এগিয়ে আসতে পারে। এটা সম্ভব হলে দেশবাসীর জন্য টিকা নিশ্চিত করতেও সুবিধা হবে।
দেশে সব মানুষের টিকা নিশ্চিত করা ও করোনা চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানি করার চিন্তা মাথায় রেখে বাজেটে বরাদ্দ এবং নীতি-কৌশল ঘোষণা করার পরামর্শ দেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, টিকা সংগ্রহ করার জন্য দেশি ও টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অ্যাডভান্স পারসেচ অর্ডার এবং চুক্তি করতে হবে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হচ্ছে সেখান থেকে টিকা আনার পাশাপাশি টিকার প্রযুক্তিও আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন করবে তাদের সঙ্গে টিকা নেওয়ার চুক্তি বা অগ্রিম টাকা দিতে হবে। এসব কোম্পানির সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি হলে এই চুক্তিনামা দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। ফলে ওই কোম্পানি টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিও করতে পারবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, করোনা রোগীর অক্সিজেন সাপোর্টেড চিকিৎসা সেবার ঘোষণা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। এজন্য সরকারিভাবে অক্সিজেন প্লান্ট ব্যবস্থা থাকবে। সারা বিশে^ই চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় ছিল, করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। করোনা এমন ভয়ঙ্করভাবে আসবে কেউ ধারণাই করতে পারেনি। তারপর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। ভারত এখনো করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। করোনা মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত। গ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে যাতে জেলা-উপজেলাতেই অক্সিজেন পায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
করোনা চলে গেলে এসব অবকাঠামো উপজেলার গরিব মানুষের সেবার জন্য ব্যবহার হবে। ফলে নির্দিষ্ট ধরনের চিকিৎসার জন্য রোগী উপজেলা থেকে চিকিৎসার জন্য রাজধানী বা বিভাগীয় শহরে যাচ্ছে। করোনা চলে যাওয়ার পর যখন মানুষ একই ধরনের চিকিৎসা উপজেলা থেকেই পাবে, এক্ষেত্রে শহরে চাপ কমবে। গ্রামের গরিব মানুষের খরচও বাঁচবে। এজন্য সরকার নিশ্চয়ই বাজেটে বরাদ্দ রাখবে।