ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রমজান-লকডাউন-পহেলা বৈশাখ একদিনে, আগের দিন বাড়তি ভিড় ব্যাংক-বাজারে

জাফর আহমদ
🕐 ৪:৩০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২১

রমজান-লকডাউন-পহেলা বৈশাখ একদিনে, আগের দিন বাড়তি ভিড় ব্যাংক-বাজারে

এক সাথে এমন বিশেষ তিন দিন কখনো আসেনি, এবার এসেছে। প্রথম রমজান, বাইরে বের হতে কঠোর বাঁধা নিষেধ এবং বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ এক সাথে আগামী কাল বুধবার। আর তাই এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও বাজারে।

প্রথম রমজান একই সঙ্গে হয়েছে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন। মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে লকডাউন আরও বাড়তে পারে। এ কারণে মানুষ একটু বেশি করে কেনাকাটা করে নিচ্ছে। গত কয়েকদিনেই এর প্রভাব ছিল, আজ মঙ্গলবার মানুষের ব্যাংক ও বাজারে যাওয়াটা কয়েকগুন বেড়েছে।

রমজান ও লকডাউনের কারণে বাংলা নববর্ষ পালনে কিছু ভাটা দেখা গেলেও বাংলা লোক-সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে পারবে না। এর মধ্যেই অনেকে পহেলা বৈশাখ পালন করবে। এ জন্য বাজারে ইলিশের চাহিদা ছিল। যদিও প্রতিবারের মত চাহিদা একটু কমই বলা চলে। তারপর যেটুকু বাকি ছিল আজ বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। গতকালও ৮৩ জন মানুষের মৃত্যুর যেনো মানুষকে বাজার বিমুখ করতে পারেনি। ইলিশের বাজার বা কাপড়ের দোকানে ভিড় তার বড় প্রমান।

লকডাউনের কারণে গত ৫ এপ্রিল থেকে ব্যাংক ১২ পর্যন্ত খোলা থেকেছে। এ সময়ের মধ্যে মানুষ ব্যাংকের লেনদেন করেছে। এ সময়েও ব্যাংকের প্রচন্ড ভিড় দেখা গেছে। বুধবার থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা হলে ব্যাংকসহ সব কিছু বন্ধ থাকবে। একদিন মানুষ ব্যাংকে যেতে পারবে না। আজ সকালে মানুষ ব্যাংক মুখি হয়েছে পুরো সপ্তাহের লেনদেন শেরে ফেলার জন্য।

রাজধানীর মিরপুর ফার্মগেট ও মতিঝিলের ব্যাংগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। এ বিষয়ে কথা হয় পল্টনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে আসা এক গ্রাহক নাফিস উদ্দিনের সাথে।

নাফিজ জানান, পুরো সপ্তাহ ব্যাংক বন্ধ থাকবে, আরও বাড়তে পারে। এ সময় নগদ টাকার দরকার হবে-এ জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাখলাম। বলা যায় না, যে করোনা মহামারি চলছে কখন কি হয়।

আজ সকালে ব্যাংকে প্রচন্ড ভিড় সামলাতে হয়েছে বলে জানালেন মিরপার-১০ এ অবিস্থত এসআইবিএল এর ডেস্ক অফিসার শওকত হোসেন।

তিনি এই গ্রাহককে বলেন, সকালে রোজা আর কঠোর লকডাউনের ভিড় সামরাতে হিমসিম খেতে হয়েছে। অবশ্য গত কয়েকদিন ধরেই এ ধরণের ভিড় সামলাতে হচ্ছে। আজ আরও খানিক বেশি ছিল। অবশ্য আজ তিনটা পর্যন্ত ব্যাংকিং সময় বাড়ানো হয়েছে। তারপরও মানুষ সকাল সকাল এসে ভিড় জমিয়েছিল। দুইটার দিকে ভিড় কমেও গেছে। এখন অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থা।

জনতা ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার নাজনিন ফেরদৌস জানান, মানুষ টাকা তোলার জন্যই বেশি এসেছেন। এর মধ্যে বৈদেশিক রেমিটেন্স তোলার জন্য বেশি সংখ্যক গ্রাহক দেখা গেছে। এখনো তারা টাকা তুলছেন।

গ্রাহকের ভিড় সামলাতে আজ ক্লান্ত ছিলেন মিরপুরের ইসলামী ব্যাংকের সিকিউরটি মোস্তাফিজুর রহমান। তবে দুপুর দুইটার পর একটু আরাম পেয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান ঈদের আগে এমন ভিড় দেখেছেন।

করোনার লকডাউন আর রমজানের কেনাকাটার ভিড় বাজারগুলোতে পড়েছে। মিরপুরের কচুক্ষেত বাজার, মিরপুর-১৩ এর কাঁচাবাজার এবং এ্যালিফ্যান্ট রোডের বাজারে মানুষের প্রচন্ড ভিড় দেখা গেছে। করোনার কারণে লকডাউন আর সেই করোনা আক্রান্তের বড় কারণ মানুষের ভিড়কে ধরা হয়। কিন্তু সেই ভিড় এড়াতে মানুষ যেন ভুলেই গেছে।

এ সময় অনেকের সাথে কথা হয়েছে। তারা সবাই জানান, অন্তত ১৫ দিনের বাজার তারা করে রাখছে। যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে অন্তত ১৫ দিনের বাজার তারা করে রাখতে চায়। তাদের ধারণা এই কঠোর লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। তখন পুলিশের অনুমতি নিয়ে বাইরে বের হওয়া লাগবে-এ কারণে আগেই তারা বাজার করে রাখতে চায়।

বাজারে চিনি, তেল, বেশন, আলু, পেয়াজ, রসুন, বেগুন, লেবুতে চাপ পড়েছে। মাছ, মাংস, মুরগি, ডিম, দুধও কিনছে মানুষের ফ্রিজের ক্ষমতা বুঝে। মিরপুরে-১০ কাজীপাড়া বাজারে কথা হয় বিক্রেতা আকবর আলীর সাথে।

আকবর আলী জানান, কাল অথবা পরশু রোজা শুরু। এ কারণে কেনাকাটা করছে। করোনা নিয়ে এবার গত বছরের মতো মানুষের মধ্যে ভয় নেই। কিন্তু সবকিছু বন্ধ করে দেয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। লকডাউনের মধ্যে মানুষ বাইরে বের হতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। এ কারণেই হয়তো রোজার আগে অনেকে বাড়তি পণ্য কিনছেন।

ক্রেতা রহমতুল্লাহ বলেন, বেশি করে কিনছি কি আর অল্প সাধে! একদিকে রোজা, আরেক দিকে কঠোর লকডাউন। বাইরে বের হওয়া যাবে না। এ জন্য বেশি করে কিনে রাখছি। অবশ্য দুইদিন আগে সব কিছু কিনেছি, এখন টুক টাক কিছু কিনে কিনছি।

 
Electronic Paper