ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টাকা দিচ্ছে না ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্স, অনিশ্চয়তায় ১৫ হাজার গ্রাহক

জাফর আহমদ
🕐 ৬:০৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৭, ২০২১

টাকা দিচ্ছে না ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্স, অনিশ্চয়তায় ১৫ হাজার গ্রাহক

ইন্স্যুরেন্স করার অর্থই হলো গ্রাহকের বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবে। আর্থিক নিশ্চয়তা দেবে, বন্ধু-স্বজনের মতো ভরসা দেবে। এবার ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লি. বন্ধু-স্বজনের ভরসার পরিবর্তে টাকা না দেওয়ার অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। গ্রাহকের পলিসি ম্যাচিউর হলেও টাকা দিচ্ছে না কোম্পানিটি। কবে দেওয়া হবে তাও বলছেন না কর্তৃপক্ষ। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় ও জেলা অফিসগুলোতে ধর্ণা দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। কোনো কোনো অফিসে কর্মকর্তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

জানা গেছে, ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গত তিন বছর আগে থেকে ১৪ হাজার গ্রাহকের পলিসি ম্যাচিউর হয়। এরপর থেকে টাকা চাইলে ক্যাশ পাওয়া সাপেক্ষে পাওনা টাকা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু পাওনা টাকা নেয়ার জন্য জেলা অফিসগুলোতে গেলে নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয় গ্রাহকদের। কিছু অফিসের লোকজনকে খুঁজে পাওয়া পাচ্ছে না। এ নিয়ে গ্রাহকরা চরম উৎকণ্ঠায় আছেন।

সূত্র জানায়, ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্সের এ পর্যন্ত ২৮ হাজার গ্রাহকের পলিসি ম্যাচিউর হয়। এর মধ্যে ১৩ হাজার সিরিয়াল পর্যন্ত গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করা হয়। এখনো বাকি রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহকের টাকা। এসব গ্রাহকের প্রতিজনের পাওনা টাকার পরিমাণ ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। গ্রাহকরা সব মিলে প্রায় একশ কোটি টাকা পাওনা ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্স কম্পানীর কাছে। যা গত তিন বছর আগে থেকে সর্বশেষ এ পর্যন্ত ম্যাচিউর হয়েছে।

অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার মধ্যে ২৬ হাজার সিরিয়াল পর্যন্ত পলিসি ম্যাচিউর হলে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছিল। কিন্তু যে বিপুল সংখ্যক পলিসি ম্যাচিউর হয়েছে, প্রধান কার্যালয়ে থেকে সে পরিমাণ টাকা সরবারহ করা হয়নি। এ অবস্থায় টাকা পরিশোধ শুরু হলে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তারা পছন্দের লোকদের টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু বেশি সময় আগে যাদের পলিসি ম্যাচিউর হয়েছে, তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

ম্যাচিউর পলিসির টাকা পরিশোধ হচ্ছে না-এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পলিসি ম্যাচিউর হওয়া গ্রাহকরা কোম্পানির অফিসে ভিড় জমান। পাশাপাশি প্রভাবশালী গ্রাহকরা চাপ দিলে দুই-তিন বছর আগের গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ না করে তাদের টাকা পরিশোধ করে আঞ্চলিক অফিসগুলো থেকে গা ঢাকা দেয় কর্মকর্তারা।

টাকা না পাওয়ায় গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। অনেকে চিকিৎসা বা অন্যান্য জরুরি কাজের জন্য টাকার দরকার হওয়ার সত্ত্বেও টাকা পাচ্ছেন না। চুয়াডাঙ্গার পলিসি হোল্ডার সেলিনা আক্তার ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০২০ সালে করোনা শুরু হওয়ার আগে জানুয়ারিতে আমার পলিসির মেয়াদ পূরণ হয়েছে। তখন থেকে টাকা দেব দিচ্ছি করে পরিশোধ করছে না। টাকার অভাবে আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছি না। অফিসে গেলে কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। যখনই যাই তখনই বলা হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে অফিসে থেকে বের হয়ে গেছেন। এভাবে টাকা তো দিচ্ছেই না, আবার কবে টাকা দেবে সে কথাও বলছে না।

গতকাল তোপখানা রোডস্থ ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্সের সুরম্য বহুতল অফিসে গেলে দেখা যায় করোনা মহামারীর মধ্যেও পাওনা টাকার জন্য বেশ কয়েকজন এসেছেন। অনেকে তাদের স্বজনদের পক্ষে প্রধান কার্যালয়ে এসেছেন। তাদের একজন বগুড়ার আরিফুর রহমান। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও টাকা দেওয়া হচ্ছে না। নানা রকম অজুহাত দেখাচ্ছে। কখনো বলছে করোনা, কখনো বলছে টাকা আসলে দেওয়া হবে। আবার কখনো বলা হচ্ছে পলিসির টাকা অন্য খাতে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ করার কারণে টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ফারইস্ট ইন্সুরেন্স কোম্পানি টাকা মেরে দিবে না।

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য চেয়ে ফোন করা হয় ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্লাহকে। তিনি ব্যস্ত থাকায় ফোন রিসিভ করেননি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়- ‘ফারইস্ট ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রায় সাড়ে তের হাজার পলিসি হোল্ডারের পলিসি ম্যাচিউর হলেও তারা টাকা পাচ্ছে না। এসব পলিসি তিন বছর আগে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ম্যাচিউর হয়েছে। পলিসি হোল্ডাররা আপনাদের আঞ্চলিক (জেলা অফিস) অফিসগুলোতে ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না, টাকা পাচ্ছে না। কোনো কোনো অফিসে কর্মকর্তাদের পাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো অফিসে তিন বছর আগের টাকা পরিশোধ না করে ২০২১ সালে ম্যাচিউর হওয়া পলিসির টাকা বিশেষ সুবিধা নিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য চাই।’ এমন ক্ষুদে বার্তার উত্তরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘এখন আমরা ১৩ হাজারের সিরিয়াল শেষ করেছি। ঈদুল ফিতরের মধ্যে ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার সিরিয়াল পরিশোধ করব।’

 
Electronic Paper