ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেপরোয়া ডাচ্-বাংলা ব্র্যাক সিটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮

ঋণ বিতরণে সুদহার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা, ৬ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ ও স্প্রেড হার (আমানত সংগ্রহ ও বিতরণের মাঝে দূরত্ব) ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু কোনো নির্দেশনাই মানছে না বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা এবং বিদেশি মালিকানাধীন সিটি এনএ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। তিন ক্ষেত্রেই বেপরোয়া দেশি-বিদেশি এই চার বাণিজ্যিক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশি মালিকানাধীন ডাচ্- বাংলা ব্যাংক গড় ২ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ করে। আর বিতরণ করে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। ব্যাংকটির স্প্রেড হার ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অপর বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করছে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ হারে; আর বিতরণ করে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হারে। ব্যাংকটির স্প্রেড হার ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দুটি ব্যাংকই আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সুদ দিচ্ছে। আবার ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশের ওপরে সুদ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমানতকারীকে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন করছে, আবার গ্রহীতারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করবে সে ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সুদ হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যাংক দুটি। বিনিয়োগ করার আগেই অতিরিক্ত সুদ দিতে হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক দুটিকে। এর ফলে ব্যাংক দুটি স্প্রেড বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা আছে তা অমান্য করছে বাণিজ্যিক ব্যাংক দুটি।   
অপরদিকে বিদেশি ব্যাংক সিটি ব্যাংক এনএ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ করছে আর বিনিয়োগ করছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ হারে। ব্যাংকটির স্প্রেড হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ হারে। অপর বিদেশি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড আমানত সংগ্রহ করছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ হারে এবং বিতরণ করছে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ হারে। ব্যাংকটির স্প্রেড হার বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিদেশি এই ব্যাংকও আমানতকারীকে ঠকাচ্ছে। ব্যাংক দুটি সর্বনিম্ন সুদ দিচ্ছে। আবার ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক এনএ কিছুটা সহনীয় সুদ নিধারণ করলেও বিতরণের কাছে থেকে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করছে। ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীর কাছে থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা করে নিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যাংকে সঞ্চয়কারী সাঈদ রহমান খোলা কাগজকে বলেন, সঞ্চয়কারীর হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক আমাদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় আনছে না। তারা কীভাবে বেশি মুনাফা করবে সে চিন্তায় থাকছে। এর ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আর এ ব্যাপারে যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে ব্যাংকগুলো আরও অন্যায় করছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।  
আমানতকারীর স্বার্থ কেউ দেখছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের সুবিধামতো আমানত সংগ্রহ করছে। আর যারা ঋণ নেবে সেই বিনিয়োগকারীরা সংঘবদ্ধভাবে চাপ সৃষ্টি করে ঋণ গ্রহণে কম সুদ দিচ্ছে। এর ফলে এক ধরনের অব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে।
শুধু চার ব্যাংকই নয়, আরও অনেক ব্যাংকই স্প্রেড নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, অন্য নির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতিও না মানার অভিযোগ থাকতে পারে এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংক রুটিন করে সব ব্যাংক পরিদর্শনে যাচ্ছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ ধরনের নির্দেশনা মানতে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে বিনিয়োগকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কম সুদের সরকারি আমানত সুবিধা ও বাংলাদেশ ব্যাংকে বিধিবন্ধ জমার হার কমিয়ে আনে। এর বদলে ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে সুদহার ৬ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণে সুদহার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রতি দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। প্রায় সব ব্যাংকই এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। বিন্তু ঠিকই সরকারের কাছে থেকে সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে।

 
Electronic Paper