ক্ষুদ্র ঋণে গ্যারান্টি দেবে সরকার
জাফর আহমদ
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২১
ছোট ছোট ব্যবসা বাণিজ্য-উদ্যোগের সম্ভাবনা আছে কিন্তু অর্থ নেই। আবার ব্যাংকের কাছে ঋণ নিতে গেলেও গ্যারান্টি না থাকার কারণে ব্যাংকও টাকা দেয় না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা থাকার পরও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এ বাধা কাটাতে কুটির শিল্প, ছোট্ট ও ক্ষুদ্রশিল্প খাতের এ ধরনের উদ্যোক্তার ঋণের গ্যারান্টি দেবে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বিভাগ এমন কার্যক্রম শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এ ধরনের ৩০০ গ্রাহকের আবেদন ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এসে পৌঁছেছে।
কুটির, ছোট্ট ও ক্ষুদ্রঋণ খাতের এ ধরনের ঋণের বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যারান্টি দেবে সরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংক এসব কুটির, ছোট্ট ও ক্ষুদ্র গ্রাহকের আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকদের ব্যবসা পরিকল্পনা ও বাস্তবতা যাচাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবে। এসব উদ্যোক্তার নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় সন্নিবেশিত করে ঋণ বিতরণের অনুমতি দেবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজের তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ করবে। ওই ঋণের টাকা কোনো কারণে ফেরত না এলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই টাকার ৮০ ভাগ ফেরত দেবে।
এ ঋণ বিতরণের জন্য ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো হলো- অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ডাচ বাংলা লিমিটেড।
এ ছাড়া বিডি ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইনান্স, আইআইডিএফসিএল, আইপিডিসি ফাইনান্স লিমিটেড, মেরিয়ান ফাইনান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও সিভিসি ফাইনান্স লিমিটেড। এসব ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের আবেদন পেলেই তা নিবন্ধন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের অধীনে প্রাথমিক পর্যায়ে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রয়োজনের আরও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া এই দুই হাজার কোটি টাকার বহু-স্তরমুখী ফলের কারণে এ তহবিলের কার্যকারিতা কয়েকগুণ পর্যন্ত বাড়বে।
ছোট্ট উদ্যোক্তাদের ইচ্ছা ও ব্যবসার ক্ষেত্র থাকলেও টাকার অভাবে তা শুরু করতে পারে না। ঋণের জন্য ব্যাংকে গেলেও জামানত না থাকার কারণে ব্যাংক ঋণ দেয় না। ফলে অনেক সম্ভাবনা আঁতুরঘরেই মৃত্যু হয়। আবার অনেকে ঝুঁকি নিয়ে এনজিও বা মহাজনী ঋণ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও বাড়তি সুদের চাপে সম্ভাবনার উদ্যোগ চিঁড়া-চ্যাপটা হয়ে যায়। এসব ব্যবসার পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাতে ছোট ছোট উদ্যোগ গড়ে ওঠে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
করোনাভাইরাস মহামারী রোধে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। এ প্রণোদনার বড় বড় ঋণগুলো নির্দিষ্ট সময়ে আগেই বিতরণ হয়ে যায়। কিন্তু ছোট্ট ঋণগুলো বিতরণ হয়নি। পর পর দুইবার ঋণ বিতরণের সময় বাড়ালেও ঋণের অর্ধেক টাকা বিতরণ হয়নি। আবার সময় বৃদ্ধি করা হয়। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয় ঋণের চাহিদা থাকলেও গ্রাহকরা জামানত সহ অন্যান্য যে সব শর্ত আছে সেগুলো পরিপালন করতে পারে না। এ কারণে এ ধরনের ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয় না। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির জানিয়েছিলেন, ছোট ছোট উদ্যোক্তারা যাতে ঋণ পায় সে জন্য দুই হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট স্কিম গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে। তখন ঋণ বিতরণে বাধা থাকবে না। এই স্কিম কার্যকরের ফলে করোনা মহামারীর অভিঘাত মোকাবিলার জন্য সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল তা কার্যকর করা যাচ্ছিল না, এই ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করার ফলে প্রণোদনার এই ছোট ঋণগুলো দ্রুত বিতরণ হবে।
এটা আরও আগে শুরু করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ করা প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, এই ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংকগুলোর একেবার ক্ষুদ্র গ্রাহক পর্যায়ে যাওয়ার কাজটি সহজ হবে। এর মাধ্যমে ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ ধরণের ঋণ বিতরণে সময় নষ্ট করে-এমন কাজ যাতে না হয় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সচেতন থাকতে হবে।
এ ধরনের কার্যক্রম সফলতা নির্ভর করবে চুক্তি করা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সততার ওপর। তারা যদি এই ঋণ রিকোভারির ব্যাপারে আন্তরিক না থাকে তাহলে উদ্যোক্তা তৈরির এই উদ্যোগ সফল হবে না। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর খেলাপি বোঝা ভারি হবে মাত্র।