ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য দ্বিগুণ করা সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৮:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য হচ্ছে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার। এটি ১৮.৯ বিলিয়ন করা সম্ভব বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্কের মতো 'প্যারা' শুল্ক বাধার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে না বলেও সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে।


বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'এ গ্লাস হাফ ফুল: দ্য প্রমিজ অব রিজিওনাল ট্রেড ইউনিয়ন ইন সাউথ এশিয়া' শীর্ষক এ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে বাংলাদেশের বাণিজ্য এখন ৮৪.৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য হচ্ছে মাত্র ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের। সারা বিশ্বে যেখানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হচ্ছে, সেখানে গত ২৫ বছরে এ অঞ্চলের বাণিজ্য ২৩ বিলিয়ন ডলারে আটকে আছে। এক্ষেত্রে চার ধরনের বাধার কথা বলা হয়েছে। উচ্চ শুল্ক, 'প্যারা' শুল্ক, অশুল্ক বাধা এবং আস্থার সংকট।

এসব বাধা দূর করতে পারলে এ অঞ্চলের বাণিজ্য তিন গুণ অর্থাৎ ৬৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া সম্ভব বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সমন্বয়ক সঞ্জয় কাঠুরিয়া।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাফটা চুক্তি রয়েছে। অর্থাৎ কোনো শুল্ক থাকার কথা নয়। অথচ এ অঞ্চলেই বেশি শুল্ক রয়েছে। সরাসরি শুল্কের বাইরে প্যারা ট্যারিফ রয়েছে। এটাকে বলা যায় কোনো শুল্ক নেই তবু সবেচেয়ে বেশি শুল্ক।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফান।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যে ব্যয় সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের গড় শুল্কহার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে এ অঞ্চলে আমদানিতে সবচেয়ে বেশি বাধা দেওয়া হয়। দেশগুলো উচ্চহারে নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে। পাশাপাশি সংবেদনশীল পণ্যের তালিকায় ফেলানো হয় অন্তত এক তৃতীয়াংশ পণ্যকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের আগে দক্ষিণ এশিয়া এক বাজার ছিল। সেই অবস্থায় তো আর এখন ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে এ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য উন্নয়নে যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কেবল ইউরোপ ও আমেরিকার নিয়ে।

মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তাতে আমি একমত। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে অন্যান্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে রয়েছে। তবে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার জন্য সরকারগুলো কাজ করছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের ভৌত যোগাযোগ বৃদ্ধির অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, পিআরআই’র এক গবেষণায় দেখা গেছে ২০০৪ সালে যখন সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া) চুক্তি হয়, তখন বিশ্ববাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও অংশগ্রহণ ছিল ৫ শতাংশ। আজ তা কমে হয়েছে আড়াই শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববাণিজ্যে এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অবদান ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অবদান ৬৩ শতাংশ। ১৯৪৭ সালের আগে এটি ছিল ৩০ শতাংশ।

ড. সাত্তার বলেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য সরকারগুলো অনেক কিছু করেছে। রাস্তা-ঘাট নির্মাণ হচ্ছে। তবে এটি আরো উন্মুক্ত করা দরকার। গ্লাসের অর্ধেক ভরে গেছে বলে বসে থাকার সুযোগ নেই। বাকি অর্ধেকের জন্য কাজ করতে হবে।

প্যানেল আলোচনায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারস্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে বড় বেনিফিশিয়ারি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণের পণ্য এখন ভারত, নেপালে প্রচুর রফতানি হচ্ছে। এটি শুরুতে এতোটা সহজ ছিল না। এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। আমাদের মান-সনদ নিয়ে এখনো আপত্তি আছে অন্য দেশগুলোর। বিএসটিআইকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

এ অঞ্চলে আস্থার সঙ্কট বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্ডার হাট এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করছে।

 
Electronic Paper