ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিয়ম ভেঙে প্রণোদনার কৃষিঋণ বিতরণ

জাফর আহমদ
🕐 ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ০৭, ২০২১

নিয়ম ভেঙে প্রণোদনার কৃষিঋণ বিতরণ

প্রণোদনার কৃষিঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে নারাজ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। কৃষি খাতে প্রণোদনা বিতরণে যে সব নির্দেশনা ছিল, সেই অনুযায়ী ঋণের পরিমাণের পাশাপাশি ঋণের ধরনেও ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। করোনার আঘাত মোকাবিলার জন্য কৃষি খাতে সরকারের আর্থিক সহায়তা অর্থাৎ প্রণোদনার ঋণের দুটি প্যাকেজ চলমান। এ সব ঋণের কৃষক পর্যায়ে সুদহার চার শতাংশ। এই প্রণোদনার ঋণের অর্থ বিতরণকারী ব্যাংক অপারেটিং চার্জ হিসেবে সরকারের কাছে এক শতাংশ পাচ্ছে।

বিতরণকারী ব্যাংক এই ঋণ বিতরণ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দিলে এক শতাংশ হারে অপারেটিং চার্জের অর্থ পাবে। প্রণোদনা প্যাকেজ দুটির মধ্যে প্রথমটি হলো পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ওই তহবিল থেকে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি ও ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাত পাবে চলতি মূলধন। এর বাইরে শস্য ও ফসল খাত যুক্ত করা হয়। ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি চাষের জন্যও চার শতাংশ রেয়াতি সুদহারে ঋণ পাবেন কৃষক।

এ ঋণের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়নি। করোনা মহামারীর মধ্যে ফসল উৎপাদনে উৎসাহ ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার এই স্কিম ঘোষণা করে। এ ছাড়া আগে থেকেই আমদানি বিকল্প ফসল ডাল, তেলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষের জন্য চার শতাংশ সুদে কৃষক ঋণ পাচ্ছেন। সঙ্গে আরও এক শতাংশ সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতিতে এই ঋণও চলমান থাকবে। এ ঋণ কৃষক পর্যায়ে চার শতাংশ সুদে বিতরণ করা হয়।

পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণার সময় নীতিমালায় বলা হয়, চলতি মূলধন পাবে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি ও ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাত। কৃষক ছাড়াও যেসব উদ্যোক্তা উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনে সরাসরি বিক্রি করে থাকেন, তারাও এই স্কিমের আওতায় ঋণ নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এককভাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিতে পারবে না। ব্যাংক তা সর্বোচ্চ চার শতাংশ সুদে দেবে। এই ঋণ সর্বোচ্চ দেড় বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। প্রথম ছয় মাস কৃষক ঋণ পরিশোধে বিরতি পাবেন এবং পরের ১২ মাসে তা শোধ করতে হবে।

করোনার অভিঘাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল মাসে কৃষি খাতে এ প্রণোদনা ঘোষণা করে। এ ঋণ বিতরণের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের কিছু বেশি ঋণ বিতরণ হয়। এরপর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণের মাত্র ৫৫ শতাংশ বিতরণ সম্পন্ন হয়। এ কারণে তৃতীয়বারের মতো আরও তিন মাস সময় বৃদ্ধি করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে প্রণোদনা ঘোষণার পর ঋণ বিতরণের জন্য ৪৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক চুক্তি স্বাক্ষর করে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রণোদনার কৃষিঋণ বিতরণে এগিয়ে থাকলেও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পিছিয়ে থাকে। ঋণ বিতরণের বিষয়িিট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও বিতরণের ক্ষেত্রে অনেক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্দেশনা মানছে না। এই ঋণ বিতরণে পরিমাণ ও এলাকা বেঁধে দিলেও অনেক ব্যাংক তা মানছে না। পরিমাণ ও বিতরণের ধরনের বাইরে গিয়ে ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অপারেটিং চার্জ দাবি করা হয়েছে। নিয়ম-বহির্ভূত হওয়ায় এই ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ ধরনের নিয়ম-বহির্ভূত ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা ঋণের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। টাকার অংকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চললে ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ বিতরণ সম্পন্ন হতো। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কম সময়ে ও কম খরচে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেশি ঋণ বিতরণ করতে চায়। এ কারণে অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছে।

নীতিমালায় যা আছে তা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, যে কোনো অবস্থাতেই নীতিমালা অনুসরণ করা জরুরি। যদি নীতিমালায় বড় ধরনের কোনো সমস্যা থাকে সে সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে। নীতিমালার কোনো সমস্যা থাকলে কোনো ভালো ব্যাংক হয়তো বিতরণ করতে চাইবে না। যদিও আমি বিষয়টি জানি না। তারপরও যদি সত্যি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের যে সংগঠন আছে সেখানে আলোচনা করে নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে।

 
Electronic Paper