ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজস্বে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা

প্রীতম সাহা সুদীপ ও আরিফ সাওন
🕐 ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ০৪, ২০২১

রাজস্বে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর ফুটপাতে হাজার হাজার দোকান বসলেও তা থেকে রাজস্ব আসে না সরকারি কোষাগারে। এই টাকা চাঁদা হিসেবে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটে। কখন উচ্ছেদের খড়গ নেমে আসে- সেই অনিশ্চয়তায় দিন কাটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। ফুটপাতের বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দ্বিতীয় পর্ব।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা চান স্থানীয়দের চাঁদা না দিয়ে সরকারি কোষাগারে টাকা দিয়ে স্বস্তিতে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে। আর এ জন্য ফুটপাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে বৈধতা দিতে দুই সিটি কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান তাদের। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর গুলিস্তানের ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী বলেন, দেখেন; বিভিন্ন সময়েই সিটি করপোরেশন জনগণের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করার অভিযান চালায়। কিন্তু ফুটপাত বেশি সময়ের জন্য মুক্ত থাকে না। যখন অভিযান চালায়; আমরা মালামাল সরিয়ে নিই। রক্ষার চেষ্টা করি। অনেকটা হয়রানি হতে হয়। অনেক সময় মালামাল নষ্ট হয়। ধরেন, সকালে অভিযান চালানোর পর বিকালে আমরা তো বসে পড়ি। ফুটপাত তো উন্মুক্ত হয় না। বরং পুলিশেরও কষ্ট হয়, কর্মকর্তাদের এবং আমাদেরও কষ্ট হয়। তারা অভিযান চালিয়ে যদি উন্মুক্ত রাখতে পারতেন, তাহলে না হয় একটা কথা ছিল।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এটা তো আমাদের রুটি রুজির ব্যাপার। আমার স্ত্রী সন্তান পরিবার পরিজন তো এর ওপরই নির্ভরশীল। আমরা যদি বসতে না পারি স্ত্রী সন্তানকে কি খাওয়াব, আর কীভাবে লেখাপড়া করাব। আয় করতে না পারলে তো, না খেয়ে মরতে হবে। ঠিক আছে। মেনে নিলাম। আপনারা আমাদের উচ্ছেদ করবেন, করেন। কিন্তু আমার বিকল্প ব্যবস্থা করে দেন। যাতে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারি।
ফুটপাতের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, মার খেলেও স্ত্রী সন্তানের কথা মনে করে ফুটপাতে বসতে হয়। যখন মনে পড়ে ছেলে বলেছে- আব্বু আমার জন্য এটা নিয়ে এসো, ওটা নিয়ে এসো, আর রাতে যদি সন্তানের জন্য কিছু না নিয়ে ফিরতে হয়; তাহলে সেই বাবার কেমন লাগে! তাই সন্তানের কথা ভেবে তখন আর কোনো মাইরের ভয় কাজ করে না। এটা সকলে বুঝবেন না। আমাদের মতো অভাবী হলে, অসহায় হলে আমাদের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারবেন।

রাজধানীর শনির আখড়ায় ফুটপাতের এক দোকানের ছবি তুলতে গেলে তারা জানতে চান ছবি কেন তোলা হচ্ছে। তখন তাদের কথায় এক প্রকার ক্ষোভ আর ভয় প্রকাশ পায়। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ছলছল চোখে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ভাই গরিব মানুষ পেটে লাথি দিয়েন না। এর ওপরই আমাদের সংসার চলে। কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তিনি কেঁদে দেন। বলেন, এক জায়গায় ঠিকমতো বসতে পারি না। মাঝে মাঝে ভেঙে দেয়। মালামাল এখান থেকে সরিয়ে ওখানে, ওখান থেকে সরিয়ে আরেকখানে; এভাবে প্রায়ই হয়রানি হতে হয়। যদি স্থায়ী একটা ব্যবস্থা হতো তাহলে একটু শান্তিতে ব্যবসা করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাঁচতে পারতাম।

কথা বলতে বলতে আরও দুই তিনজন ব্যবসায়ী চলে আসেন। বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মনে একটাই আতঙ্ক কাজ করে কখন বুঝি ভাঙতে আসে। আরেক ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনি কি ফুটপাতে ব্যবসা করতে পারবেন। বসতে পারবেন। এখন পারবেন না। কারণ, আপনি ভালো চাকরি করেন। হ্যাঁ, আপনি বসতেন। যদি আপনি চাকরি না করতেন। সংসার চালানোর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকত, তখন স্ত্রী সন্তান বা মা বাবার মুখে ভাত তুলে দিতে আপনাকে অবশ্যই ফুটপাতে আসতে হতো। অতএব একটু বোঝেন যে আমরা কোন পরিস্থিতিতে ফুটপাতে এসেছি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান হচ্ছে। পুলিশকে আমরা জানাচ্ছি, চিঠিও দিচ্ছি। পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

অভিযান চালিয়েও যেহেতু তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে তাদের ফুটপাতে রেখে শৃঙ্খলার মধ্যে এনে ফুটপাত থেকে রাজস্ব আনার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মানুষের চলার জায়গা। সিটি করপোরেশন এখান থেকে রাজস্ব আদায় করতেও চায় না। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা এখনো নগর ভবনের নেই। যদি থাকে ভবিষ্যতে যদি মেয়র মহোদয় বা এখানকার পরিষদ যদি মনে করে, তারা ডিসিশন নেবেন।

ফুটপাত থেকে রাজস্ব আদায়ের প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, এটা তো সরকারের ঊর্ধ্বতন পলিসির বিষয়। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটাই এক্সিকিউট করব। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেওয়ার মতো আদেশ আমাদের কাছে নেই।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ফুটপাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফুটপাতে দোকান বসানো, ভ্যানে দোকান পরিচালনাসহ বিভিন্ন সময়েই দুই সিটি কররোরেশন বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু যথাযথ মনিটরিং বা তদারকির অভাবে সেসব উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদি ফল আসেনি।

 
Electronic Paper