ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি ১০৯৭১ কোটি

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮

ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রভিশন (খেলাপি ঋণে গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের সঞ্চিতি) ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। একইসঙ্গে প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে আরও ৭টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন প্রান্তিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩টিতে। আগের বছর একই সময়ে প্রভিশন রাখতে অসমর্থ্য ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ৬টি। এক বছরে প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ ব্যংকের সংখ্যা যোগ হয়েছে ৭টি। প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হওয়া ব্যাংকের তালিকায় নতুন যোগ হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক রয়েছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। আগে থেকেই প্রভিশন ঘাটতির কবলে নিমজ্জিত ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ছিল-  বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতের মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১০ হাজার ৯৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এক বছর আগে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এক বছরে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। একই সময়ে গ্রাহকের কাছে থাকা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৯৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে টাকার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি ৯২ হাজার টাকা। এক বছর আগে একই সময়ে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যা সাধারণত মুনাফা থেকে রাখা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের তিনটি স্তর রয়েছে। সেগুলো হলো- সাব স্ট্যান্ডার্ড বা কম মাত্রার খেলাপি ঋণ; ডাউটফুল বা মধ্যম মনের খেলাপি এবং ব্যাড অ্যান্ড লস বা মন্দমানের ঋণ। তিন ধরনের ঋণের বিপরীতে তিন রকমের প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকগুলোকে সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২৫ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। ডাউটফুল ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয় ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যাড অ্যন্ড লস মানের ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। যাতে গ্রাহক চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক দিতে পারে। তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হবে ৪৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১০ হাজার ৯৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কম রেখেছে।  
সম্প্রতি ফারমার্স বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির ইস্যুটি নতুন করে সামনে চলে এসেছে। বিশেষ করে ফারমার্স ব্যাংকের কেলেঙ্কারির পর গ্রাহকরা আমানত ফেরত পেতে ব্যাংকটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সে সময় ব্যাংকটি কিছু পরিচালকের অসৎ উপায়ে ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া ও অস্থানে ঋণ বিতরণ করার ফলে তারল্য সংকটে পড়ে। পাশাপাশি নতুন ব্যাংক হওয়ার পরও ব্যাংকটির খেলাপি বেড়ে যায়। সব মিলে ব্যাংকটি কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সরকার ৭২০ কোটি টাকা দিয়ে ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেওয়ার পর ব্যাংকটির সমস্যা সাময়িকভাবে দূর হয়। আগে থেকে ব্যাংক পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভিশন রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ফারমার্স ব্যাংক দুর্নীতির পর থেকে প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর নতুন করে কড়াকড়ি জারি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

 
Electronic Paper