ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পিপলস লিজিংয়ে খেলাপির চারজনই সাবেক পরিচালক

জাফর আহমদ
🕐 ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০

পিপলস লিজিংয়ে খেলাপির চারজনই সাবেক পরিচালক

অবসায়নের প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের ১০টিই খেলাপি। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিই পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক বা প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এ সম্পর্কিত একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ দশজন গ্রাহকের মধ্যে রয়েছেন আরেফিন সামসুল আলামিন, মতিউর রহমান, পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং জেফরিং হোল্ডিং লিমিটেড, জেনিথ হোল্ডিংস লিমিটেড, কার্নোপুর এগ্রো ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড, ইন্ট্রাকো সিএনজি ও এক্সিলেন্ট বিল্ডার্স লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ের মোট এক হাজার ৬৯ কোটি ৭৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৫১ টাকা রয়েছে।

 

এর মধ্যে প্রথম তিনজনই প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক। চতুর্থ গ্রাহক হচ্ছেন পিপলস লিজিংয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক আরেফিন সামসুল আলামিনের তিনটি ঋণের সুদে আসলে মোট ঋণের পরিমাণ ৩৮৪ কোটি ৫ লাখ ৭ হাজার ৮৩ টাকা পাওনা; মতিউর রহমানের দুইবার নেওয়া ঋণের সুদে আসলে ১৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৪৯০ টাকা; আহসান হাবিবের তিনটি ঋণের সুদে আসলে মোট ১১৬ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩২১ টাকা; পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫ টাকা; নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং ১৩৪ কোটি ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬৮৬ টাকা; জেফরিং হোল্ডিং লিমিটেডের ১৯ কোটি ২ লাখ ৩ হাজার ৯২০ টাকা; জেনিথ হোল্ডিং লিমিটেড ১৯ কোটি ২ লাখ ২৩ হাজার ৯২০ টাকা; কর্নোপুর এগ্রো ইন্ডাট্রিজ লিমিটেডের ৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৭৭৩ টাকা; ইন্ট্রাকো সিএনজি লিমিটেডের ২৮ কোটি ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪০ এবং এক্সিলেন্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ১৬ কোটি ৫০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৩ টাকা।

এ সব ঋণ কোনো কোনোটি রিসিডিউল করা। কোনটি ঋণ নেওয়ার পর থেকে কোন কিস্তিই পরিশোধ করেনি। আরেফিন সামসুল আলামিনের তিনটি খেলাপি ঋণই সাবস্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে রয়েছে। অন্য সাবেক পরিচালক মতিউর রহমানের দুটি ঋণ মন্দ পর্যায়ে আছে। অপর সাবেক পরিচালক আহসান হাবিবের মার্জিন ঋণ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণাচার ভঙ্গ করে নিজেরা পরিচালক থেকে ঋণ হাতিয়ে নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তুত করা সারমর্মে দেখা যায়, চলতি ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমান (আউটস্ট্যান্ডিং) এক হাজার ৯৫৪ কোটি ৯৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৭৫২ কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বাকি ২০২ কোটি ৬২ লাখ ১১ হাজার টাকা ভালো ঋণ। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর মাসে কার্যক্রম শুরুর ২২ বছরের মধ্যে এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নে পাঠাতে হচ্ছে সরকারকে। এ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দেখভালের দায়িত্বও ছিল এ সংস্থার। তদারকি দুর্বলতা ও পরিচালকদের অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকা। আমানত সংগ্রহে বেশি সুদ ও চটকদার সুবিধা ঘোষণা বিজ্ঞাপন দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও টাকা জমা রাখতে বাদ যায়নি।

নিয়ম বহির্ভূতভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির আমানত সংগ্রহ, বিতরণে দুর্নীতি-অব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্তদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের অর্থ লুটপাটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আগে থেকে পর্যবেক্ষণ করলেও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে অবসায়নের জন্য আদালত থেকে অনুমতি সংগ্রহ করে করতে বাধ্য হয়। এরই মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধ করার কথা ঘোষণা করে।

 
Electronic Paper