ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি চলছেই

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি চলছেই

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে করা জরিমানার তথ্য চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের পর দুবার এ তথ্য চাইলেও অধিকাংশ কাস্টম হাউসের তথ্য পাওয়া যায়নি। রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে এনবিআর উদ্যোগ নিলেও কার্যত তা কাজে আসছে না। আর জরিমানার তথ্য দিতে অনীহা অধিকাংশ কাস্টম হাউস কর্মকর্তার। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কাস্টমস অ্যাক্টের কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর-৩২ ধারায় বিধান রয়েছে অপরাধ সংঘটিত হলে সর্বনিম্ন ২০০ শতাংশ জরিমানা করার। অর্থাৎ কোনো পণ্য আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করলে সর্বনিম্ন ২০০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। কিছু কাস্টম হাউস এ আইনের বাস্তবায়ন করলেও অধিকাংশ হাউসে গড়িমসি বিদ্যমান বলে অভিযোগ আছে। এতে বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এনবিআর থেকে ৩২ ধারায় করা জরিমানার তথ্য চাইলেও অধিকাংশ কাস্টম হাউস এ তথ্য এনবিআরে পাঠাতে গড়িমসি করছে। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত চিঠি কাস্টম হাউসগুলোর কাছে পাঠায় এনবিআর। এখন পর্যন্ত একটি কাস্টম হাউস ছাড়া কোনো হাউস এ তথ্য দেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে- কিছু কিছু কাস্টম হাউসে এ আইনের বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ হাউসে চলছে গড়িমসি। অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে এ আইনের প্রয়োগে তাগিদ নেই অনেকের। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে তথ্য প্রদানের জন্য একাধিকবার পত্র দেওয়া হলেও দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং ঢাকা কাস্টম হাউস এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য এনবিআরকে দিচ্ছে না। নানা বাহানায় সময়ক্ষেপণ চলছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের শুল্ক নীতির সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, এনবিআরের একটি সূত্র বলছে, জরিমানার তথ্য খুবই স্পর্শকাতর। কারণ জরিমানার ক্ষেত্রে কাউকে সুবিধা দিলে অ্যাকশনে যাবে এনবিআর। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে যদি সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়, সেক্ষেত্রে এনবিআরের কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। তাই কিছু কাস্টম হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আর কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জরিমানা বাবদও সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি সংঘটিত হচ্ছে। যেখানে ২০০ ভাগ জরিমানা করার বিধার সেখানে হয়তো ৫০ শতাংশ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা করা হয়েছে। আর এসব কারণে বিষয়টি নিজেদের কাছে রাখতে চান মাঠপর্যায়ে কাস্টমসের শীর্ষ কিছু কর্মকর্তা।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত একটি কাস্টম হাউসের তথ্য ছাড়া আর কোনো তথ্য আসেনি। সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, ৩২ ধারায় এর আগেও একবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। এবারও এমনি হবে। কারণ এসব তথ্য এনবিআর যাচাই-বাছাই করলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। যার কারণে অনেকের এসব তথ্য দিতে চাচ্ছেন না।

সূত্র আরও জানায়, দেশের ছয়টি কাস্টম হাউসকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে যেসব পণ্য চালানে জরিমানা করা হয়েছে, তার তথ্য চেয়েছে রাজস্ব বোর্ড। এর মধ্যে বেনাপোল কাস্টম হাউস ছাড়া বাকি পাঁচ কাস্টম হাউস এনবিআরের এ চিঠি আমলেই নিচ্ছে না। মাস পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য চালানের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে অধিকাংশ কাস্টম হাউস। এসব পণ্য চালান এনবিআর পর্যালোচনা করলে হয়তো কারও কারও সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসবে। বিশেষ করে যেসব পণ্য চালানে অনিয়ম হয়েছে অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বা কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা করে পণ্য চালান খালাস করা হয়েছে, সেসব বিষয় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে চলে আসবে। যার কারণে এসব পণ্য চালানের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে কাস্টম হাউস।
তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৫ মাসের তথ্য কম্বাইন্ড করে দিতে হয়। যার কারণে একটু সময় লাগছে। দেশের অন্যতম দুটি কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এনবিআর সদস্য চিঠির সত্যতা স্বীকার করে বলছেন, তথ্য চেয়েছি এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

 
Electronic Paper