ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রিচার্ভ চুরি

ডিসেম্বরের মধ্যেই মামলা যুক্তরাষ্ট্রে

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ উদ্ধারে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করবে বাংলাদেশ।

মামলার ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক হিউন পেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের অভিযোগপত্র ও ফিলিপাইনের আদালতের মাধ্যমে ১৫ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার ঘটনা।  
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চুরি যাওয়া রিজার্ভের মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার কার্যক্রম বর্তমানে ফিলিপাইনে আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং সেখানকার আইনি ব্যবস্থায় তা সম্পন্ন করতে বেশ কিছু সময় লেগে যাবে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মামলা করা সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিজ কর্তৃক দায়েরকৃত অভিযোগটি বাকি চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করতে কাজে লাগানো হবে।
এ বিষয়ে ইউএসএ টুডে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় উত্তর কোরীয় হ্যাকারের পার্ক জিন হিয়কের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এ অভিযোগপত্রে বলা হয়, পার্ক জিন হিয়ক নামের উত্তর কোরীয় ওই হ্যাকার জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে সনি করপোরেশনে সাইবার হামলা ও ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার কম্পিউটার ম্যালওয়ার ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ গঠন সম্পর্কে দেশটির সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন ডেমারস জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই এসব হ্যাকিং কর্মকাণ্ড করেছেন পার্ক জিন। অভিযোগে শুধু তার নাম রয়েছে। যদিও এ কাজে তার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতির শিকার যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অজ্ঞাতসারে করা হয়েছে। বাংলাদেশ এতে কোনোভাবেই জড়িত নয়।  
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপকে একটা বড় ধরনের অগ্রগতি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি হয়েছিল, তাই যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এ ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশেও সিআইডি এই সাইবার হামলার ঘটনা তদন্ত করছে। তারা সব কিছুই দেখছে। আমরা চাই যারা দোষী, তারা ধরা পড়ুক।’  
যুক্তরাষ্ট্রের এ মামলা প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে চুরি যাওয়া রিজার্ভ উদ্ধারে চূড়ান্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হলো বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে থেকে ফিলিপাইনের আদালতের মাধ্যমে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। বাকি অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে কঠিন হচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে এটা প্রমাণ করতেই বেগ পেতে হচ্ছিল। বরং ফিলিপাইনের যে ব্যাংকের মাধ্যমে হ্যাকারদের কাছে অর্থ চলে গেছে সেই রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার অভাব ও কারও না কারও সংশ্লিষ্টতার কারণে টাকা হ্যাকাররা নিয়ে গেছে। সে কারণে  রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনের কোনো দায় নেই।’ এ অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে বাংলাদেশের পুলিশের সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন ফিলিপাইনের আদালতে ইতোমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এর অভিযোগ গ্রহণ প্রমাণ করে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিচার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকারা অর্থ চুরি করে নিয়ে গেছে। মামলার অভিযোগপত্রের সূত্র ধরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সেখানকার আইনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে  যুক্তরাষ্ট্র সরকার উত্তর কোরিয়ার নাগরিক পার্কের বিরুদ্ধে মামলা ও সিআইডির প্রাথমিক সাইবার তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে এটা নিশ্চিত এবং এর সঙ্গে জড়িত বিদেশিরা। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে এবং বাংলাদেশের দাবির পক্ষে আরও জোরালো ভূমিকা রাখা সহজ হবে।

 
Electronic Paper