ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ কঠোর করার পরামর্শ

জাফর আহমদ
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০

আমদানি-রপ্তানিতে অর্থ পাচার রোধে ব্যাংকের অটোমেশন ও পর্যবেক্ষণ কঠোর করার পরামর্শ দিয়েছে ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি।’ গতকাল কমিটির ১৮তম বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায় দক্ষ লোক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, অর্থ পাচারের বড় মাধ্যম হচ্ছে আন্ডার ইনভয়েজ ও অভার ইনভয়েজ।

পণ্য রপ্তানি সময় কম দাম দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। দেশে আমদানি পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা বিদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য ঋণপত্র খুলে থাকে, টাকা পাচারের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সে সব ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায় অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।

যাতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় অসাধু লোক পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে দাম বেশি বা কম দেখিয়ে অর্থ পাচার করতে না পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নির্দেশনা ও তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমদানি-রপ্তানির জন্য এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির যাবতীয় রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতি চার ঘণ্টার মধ্যে অনলাইনে এ রিপোর্ট দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংক।

যা বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই শাখা পণ্য আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে টাকা পাঠানোর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পণ্য এবং পণ্য রপ্তানির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সময় মতো রপ্তানি আয় বা আমদানি পণ্য দেশে না এলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জবাব দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য রপ্তানিলব্ধ আয় দেশে না আনার জন্য সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যক ব্যাংক ও রপ্তানিকারকের কাছে কৈফিয়ত তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সিনিয়র অর্থসচিব আসাদুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের পণ্য আমদানি-রপ্তানি পর্যবেক্ষণ শাখাকে পর্যবেক্ষণ জোরদার ও পণ্যমূল্যের তালিকা সংবলিত ডাটাবেজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আন্ডার ইনভয়েজ বা ওভার ইনভয়েজ কেউ না করতে পারেন।

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এ ধরনের অর্থ পাচার রোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া সম্প্রতি সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্ট ও গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি রিপোর্ট-এ বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়টি এ বৈঠকে উঠে আসে। দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে খবর এলেও দেশের অভ্যন্তরে তথ্যের উৎসে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আবার বিভিন্ন মাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী অর্থ উদ্ধারে কাজ শুরু করলেও দেশগুলোর সঙ্গে যোগযোগ না থাকার কারণে সে অর্থ উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যায়।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসানকে।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দায়ের মামলা, বিদ্যমান আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, তথ্য বিনিময়ে জটিলতা, বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা, উদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কিত কৌশল বৈঠকে আলোচনা হয়।

 
Electronic Paper