ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিলেট রপ্তানির সুখবর সংকটে ইস্পাত শিল্প

আলতাফ হোসেন
🕐 ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০২০

রড তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট করোনাকালে রপ্তানির সুখবর দিয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত নামক একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ সুখবরের বিপরীতে নতুন সংকট দেখছেন ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির প্রাথমিক কাঁচামালের তীব্র সংকটের পাশাপাশি দামও বেড়েছে। ফলে আমদানি কমেছে ৪২ শতাংশ। উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার ধকল কিছুটা সামলে নিয়ে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বেড়েছে। ইস্পাত পণ্যগুলোর চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু কাঁচামাল সংকটে কিছু ছোট কারখানা তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় বিলেট রপ্তানির বিপরীতে দেশীয় চাহিদা মেটানো নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, রড তৈরির প্রাথমিক কাঁচামাল স্ক্র্যাপ, স্পঞ্জ ও পিগ আয়রন ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি পুরনো লোহার টুকরা আমদানি হয়। দেশ দুটি থেকে মোট আমদানির ৩০ শতাংশ আসে। করোনার কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে পুরনো অবকাঠামো ভেঙে নতুন অবকাঠামো তৈরির কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এতে রড তৈরির কাঁচামালের সরবরাহও কমেছে। আবার অনেক দেশ করোনা সামলে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে। তাতে ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) জানায়, দেশে ইস্পাতশিল্প বাজারের আকার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ইস্পাত খাতের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ৮০ লাখ টন। এ খাতে উদ্যোক্তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। ইস্পাত শিল্পের প্রাথমিক কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। এ ছাড়াও ভ্যাট, অন্যান্য কর বৃদ্ধি ও সুদের উচ্চ হার প্রভাবিত করে চাহিদা ও মূল্য দুটোকেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প, দেশজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণযজ্ঞ আর দ্রুত নগরায়ণে দেশের নির্মাণ খাতের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী দুই দশকে দেশের এ খাতে বার্ষিক দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু করোনায় ইস্পাতের কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে গড়ে উঠেছে ৩০০টির বেশি রি-রোলিং মিল। বছরে ন্যূনতম ১০ হাজার মেট্রিক টন রড উৎপাদন করে- এমন কারখানার সংখ্যা ৫২টি। এসব কারখানায় উৎপাদন হয় ৯৮ শতাংশ রড। এর বাইরে ফ্ল্যাট স্টিল বা ঢেউটিনসহ পাত উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানাও রয়েছে। ইস্পাত খাতে ছোট ও সনাতনী কারখানার সংখ্যাও অনেক। বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ এ খাতের ব্যবসায়ে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছে।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি জানান, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০০ ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্পাত ব্যবহারের পরিমাণ ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ইস্পাত শিল্পখাত বিকাশের পথে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে শিল্প মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এ শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্য করতে মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে জাহাজভাঙা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলায় জাহাজভাঙা শিল্প জোন গড়ে তোলা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানোয়ার হোসেন বলেন, ইস্পাত শিল্প দেশের উন্নয়নের হাতিয়ার। এখন দেশে বিশ্বমানের ইস্পাত উৎপাদন হচ্ছে। এতে প্রতি বছর অন্তত ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু দুই মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে রড তৈরির প্রাথমিক কাঁচামাল পুরনো লোহার টুকরার টনপ্রতি দাম ১০০ ডলার বেড়েছে। দেশে মজুদও গতবারের তুলনায় অনেক কম। এ সংকটে অনেক কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এ থেকে বের হতে হলে প্রণোদনার পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে শর্ত শিথিল ও শুল্ক-কর কমানো প্রয়োজন।

রাজধানীর বনানীতে জিএম স্টিল এজেন্সির এ জি এম মো. ইয়াছিন বলেন, রডের দাম প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। মিলগুলো বাজার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। ক্রেতারা যে বাজেট নিয়ে রড কিনতে আসেন দাম বাড়তি দেখে চাহিদা অনুযায়ী নিতে পারছেন না। ফলে বিক্রিও কমে গেছে। মিলগুলো উৎপাদন অব্যাহত রেখে সরবরাহ করলে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
রড উৎপাদনের মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট। এই বিলেট উত্তপ্ত করে ছাঁচে ফেলে রড তৈরি করা হয়। কয়েক বছর আগেও রড তৈরির কারখানাগুলোয় চাহিদা অনুযায়ী বিলেট তৈরি হতো না। ফলে বেশির ভাগ কারখানাই বিলেট আমদানি করে রড উৎপাদন করত। তাতে খরচও বেশি পড়ত। পরবর্তী সময়ে সরকারি নীতি পরিবর্তনের কারণে এ খাতে নতুন কারখানা গড়ে তোলেন উদ্যোক্তারা। এতে ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে বিলেট আমদানির চিত্রও। এখন রড ও রডজাতীয় পণ্য তৈরির কারখানাগুলো নিজেরাই পুরনো লোহা গলিয়ে বিলেট উৎপাদন করছে। নতুন বিনিয়োগে কারখানা স্থাপন হচ্ছে। এতে বিলেট আমদানি কমে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জিপিএইচ ইস্পাতের ২৫ হাজার মেট্রিক টন বিলেট রপ্তানি আদেশ দেশের জন্য সুখবর।

 
Electronic Paper