ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ভোগ্যপণ্য

শাহাদাত স্বপন
🕐 ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৯, ২০২০

ভোগ্যপণ্যের দাম গত তিন মাসে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে মানুষের হাতে অর্থের অভাব, অন্যদিকে প্রত্যেক পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। শীতকালীন সবজির দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মতিঝিল, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। গত দুই মাসেই প্রতি কেজি ধনেপাতায় বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। নি¤œআয়ের মানুষের একমাত্র উপায় শাকেরও বেড়েছে দাম। প্রতি কেজি শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, উস্তা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, শিম ১৫০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার বাজার মনিটরিং করলেও তার প্রতিফলন নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, অসাধু মজুদদার ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. এম. এ. সামাদ বলেন, অসাধু মজুদদার ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। চলছে চরম মুনাফাবাজি।

ইতিমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। একদিকে করোনা মহামারীতে জনগণের আর্থিক দুরবস্থা, অপরদিকের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, একটি দেশ এভাবে চলতে পারে না। জনগণ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হতে পারে না। অবিলম্বে কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের পরিচালক শামীম আল মামুন জানান, আমরা বাজারগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। পেঁয়াজ-আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি টিম রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। এতে আমরা ভালো ফলাফল পাচ্ছি। শীতের সময় শীতের সবজি প্রতি কেজি ৮০ টাকার ওপরে ক্রয় করতে হচ্ছে। যা বিগত বছরগুলোতে একই সময়ে বিক্রি হতো প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকায়। এমনকি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পর পেঁয়াজের দাম যা বেড়েছিল আমদানি চালুর পরেও তা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পেঁয়াজের দাম এই মুহূর্তে আর কমানো সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও সেই দাম আর কমছে না। ব্যবসায়ীদের এমন স্বেচ্ছাচারিতার সমালোচনা করে তারা বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের বারবার ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও কেন তা মানছেন না? এটা শক্তভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।

একদিকে ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা অপরদিকে ব্যবসায়ীদের কাছে সরকারের নতজানু ভাব। সব মিলিয়ে ভোগ্যপণ্যের দামের দাম টেনে ধরার অভিভাবক নেই বললেই চলে। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন অজুহাতে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তা কখনই আর আগের জায়গায় আসেনি। দেশের ব্যবসায় ক্ষেত্রে এমন স্বেচ্ছাচারিতা চলতে থাকলে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে হাহাকার তৈরি হবে। এতে করে সমাজে অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বাড়বে বলেও মত দেন অনেকে।

এদিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ফলে বীজের সংকট হবে কিনা জানতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, আপনারা জানেন বীজের সংকটের বিষয়টি ‘ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই’-এর ওপর নির্ভর করে। ধরুন এ বছর পেঁয়াজের দাম বেশি গেছে, ফলে কৃষক যদি মনে করে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করবে। সে ক্ষেত্রে বেশি পেঁয়াজের বীজ প্রয়োজন হবে। তখন পর্যাপ্ত জোগান দিতে না পারলে পেঁয়াজের বীজের দাম বাড়বে। তাছাড়া কৃষক যদি পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষণ করে থাকে তাহলে দাম যেমন স্বাভাবিক থাকবে বীজের সংকটও তেমন মোকাবিলা করতে হবে না।

তিনি জানান, আমাদের দেশে প্রতিবছর ১১ থেকে বার শত মেট্রিক টন পেঁয়াজের বীজ দরকার হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন সংরক্ষণ করা হয়। বীজ সংরক্ষণকারী কোম্পানিগুলো ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিকটন বীজ সংরক্ষণ করে যা মোট প্রয়োজনের মাত্র ৭ থেকে ১০ শতাংশ। বাকি বীজ কৃষকরা নিজেরা সংরক্ষণ করে। এ জন্য কৃষকরা কী পরিমাণে সংরক্ষণে রেখেছে তার ওপর নির্ভর করছে বীজের দাম বাড়বে নাকি কমবে। আর কৃষক কী পরিমাণে সংরক্ষণ করেছে তা জানাটাও অনেকটা দুষ্কর। আমরা এটা বলতে পারি কৃষক পর্যাপ্ত পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করে থাকলে বীজের সংকট হবে না।

আমাদের দেশে ৩৫ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজের দরকার হয় সেখানে উৎপাদন হয় ২৫ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতিকৃত ১০ লাখ মেট্রিকটন বীজের সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় মূল্য বৃদ্ধি পায়। আর এটা সামলাতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। এতে বেশি বীজের দরকার হবে। এই প্রেক্ষাপটে যেহেতু বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বেশি বীজের সংকট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন এই কর্মকর্তা।

 

 
Electronic Paper