প্রণোদনা বিতরণে আগ্রহ নেই অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
জাফর আহমদ
🕐 ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৬, ২০২০
করোনা অভিঘাত মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রণোদনা বিতরণে ছয় মাস পর অর্থ নিচ্ছে মাত্র চার প্রতিষ্ঠান। বাকি ১৫ প্রতিষ্ঠানে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ছয়মাস অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত আবেদনই করেনি ২৫টি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবেদন না করা এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনা মোকাবিলায় এপ্রিল মাসে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে বাণিজ্যক ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিলের পাশাপাশি সরকারের পুনঃঅর্থায়ন রয়েছে। পুনঃঅর্থায়ন হলো ব্যাংক বা অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে গ্রাহকদের ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ বিতরণ করবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সমপরিমাণ টাকা ও এক শতাংশ হারে সুদ বাবদ অর্থ দেবে। এর বাইরে নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য জমা দিয়ে ৫ শতাংশ সুদ বাবদ টাকা নিয়ে নেবে। পুনঃঅর্থায়ন নেওয়া ও নিজস্ব তহবিল থেকে প্রণোদনা বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দেওয়া হলেও এ সব অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি।
জানা গেছে, দেশে এ ধরনের অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৪টি। এর মধ্যে ছয় মাসে আবেদন করেছে ১৯ অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত আবেদন করেনি ২৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবেদন করা ১৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করার পাশাপাশি অর্থ বিতরণ করে চার প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আইপিডিসি, বিডি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স। এ প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ করা টাকার পরিমাণ যথাক্রমে তিন কোটি টাকা, এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, এক কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ৫০ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আগস্ট মাসে প্রণোদনার জন্য আবেদন করে।
অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বড় গ্রাহকের কাছে থেকে আমানত সংগ্রহ করে গ্রাহকের মাঝে বিতরণ করে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সুদহার বেশি। পাশাপাশি আমানতেও সুদহার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার কারণে বেশি সুদ হওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। আমানতে, বিতরণে বেশি সুদ হওয়ার কারণে এ সব প্রতিষ্ঠান ঝামেলায় পড়ে বেশি। খেলাপি হয়ে পড়ার কারণে গ্রাহকরা টাকা ফেরত দিতে পারে না, বন্ধের উপক্রম হয় এ সব প্রতিষ্ঠান। টাকা ফেরত না দেওয়া, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও সুশাসনের অভাবে ইতোমধ্যে একটি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো না।
করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের থেকে প্রণোদনার টাকা অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠান বিতরণ করছে না। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফারইস্ট ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্ট লিমিটেডের একজন গ্রাহক এই প্রতিবেদককে বলেন, করোনার কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের গ্রাহকরা সরকারের প্রণোদনা পাচ্ছে, আমরা পাচ্ছি না। অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে গেলে বলা হচ্ছে সরকারের প্রণোদনা ব্যাংকের গ্রাহকের জন্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানই নাম উল্লেখ করে কথা বলতে রাজি হননি। মেরিডিয়ান ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরতেজা আহমেদ খান এই প্রতিবেদককে বলেন তিনি আগামী সপ্তাহে কথা বলতে পারবেন। কথা বলতে চাননি আরও ৩টি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে অন্য একটি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাইরে থেকে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান বলে মনে হলেও ভিতরে ভিতরে এসব অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফাঁকা হয়ে গেছে। মোটের ওপর ৫টি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সক্ষমতা নিয়ে টিকে আছে। ব্যাংক থেকে বেশি সুদহারে ঋণ নিয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এই অর্থ নিয়ে কোনো গ্রাহক ফেরত দিতে পারছে না। সে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রণোদনা বিতরণ করা বা অন্য কিছুই আসা করা সম্ভব নয়।