ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকায় বিক্ষোভে ক্ষুব্ধ ইইউ এমপি

পোশাক রপ্তানিতে সমস্যা দেখছেন না উদ্যোক্তারা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৫, ২০২০

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ। কিন্তু সম্প্রতি ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের পণ্য ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য ফ্রান্সের রাজনীতিক ভার্জিনি জোরোন। তবে ভার্জিনি জোরোনের এমন আহ্বানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা নেতারা। তাদের মতে, ইউরোপের সঙ্গে এ সম্পর্ক আমাদের ব্যবসায়িক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার। কোনো ব্যক্তির আহ্বানে তা শেষ হবে না।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশে যা হয়েছে, তা পুরোপুরি বেসরকারি পর্যায়ে। একটি ধর্মীয় সংগঠনের আহ্বানে এ বিক্ষোভ মিছিল হলেও নবীপ্রিয় সকল শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। এটা সরকারের অবস্থান নয়।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। প্রায় প্রতিটি দেশই বড় অর্থনীতির দেশ। এসব দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা যুক্তরাজ্যের পরই অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স। বাংলাদেশের হিমায়িত মৎস্যের প্রধান বাজার ইউরোপীয় দেশগুলো।
এদিক থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য ইউরোপের সকল দেশই বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাকের কোটা সুবিধা হারালে সে দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি তলানিতে নামে। সেদিক থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি সহানভূতিশীল। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্ম পরিবেশসহ বিভিন্ন শর্ত দিলেও কোটা তুলে নেয়নি। সে কারণে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুবিধাজনক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালে শুধু ফ্রান্সেই ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ফ্রান্স থেকে আমদানি করে মাত্র মাত্র ৮ ভাগ পণ্য। সে বিবেচনায় ফ্রান্সের সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্পর্ক বাংলাদেশের অনুকূলে। এক্ষেত্রে কোনোভাবে ফ্রান্স বা ইইউরোপীয় ইউনিয়নে ক্রেতাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বাজার ছোট্ট হয়ে আসতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি কমে এসেছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিবাদে সারা বিশে^র মতো বাংলাদেশেও বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরই প্রতিবাদে ফ্রান্সের রাজনীতিক ও ইইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ফ্রান্সবিরোধী খবর ট্যাগ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা দ্রিয়াকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা ফ্রান্সে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, কেউ মারা যাক, সেটা আমরা চাই না। আমরা এও বলেছি, আমরা ফ্রিডমে বিশ্বাস করি, তবে এসব বিষয় নিয়ে আরও স্পর্শকাতর হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে উস্কানিমূলক কোনো কিছু করা ঠিক হবে না বলেও আমরা জানিয়েছি।’ ফ্রান্স ইস্যুতে ঢাকায় হেফাজত ইসলামসহ অন্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। যে কোনো দলই মত প্রকাশ করতে পারে, তবে সেটা যেন হয় শান্তিপূর্ণভাবে।’ ফ্রান্স ইস্যুতে বুধবার তরিকত ফেডারেশনের নেতারা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা এ নিয়ে জাতীয় সংসদে রেজুলেশন তোলার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি তাদের বলেছি, আপনারাও সংসদ সদস্য, সেটা আপনারা তুলতে পারেন।

সরকারের এ অবস্থানকে সমর্থন করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেন, ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল তো সরকারের অবস্থান ছিল না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সরকার তার স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ে সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সারা বিশে^ই এ ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। তাই বলে তো সব দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে না। তাছাড়া যে ইস্যুতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সে বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন। এরপর বাংলাদেশের পণ্য ব্যবহার না করতে কারও আহ্বান নিশ্চয়ই ফ্রান্সের মানুষ গ্রহণ করবে না।

 
Electronic Paper