ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিদেশ গমনেচ্ছুদের সহজ শর্তে ঋণ

জাফর আহমদ
🕐 ১০:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৮

বর্তমানে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নামে। এর পরের বছর প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়লেও চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাসে আবার তা কমে যায়।

অন্যদিকে আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে স্বাভাবিকভাবেই টান পড়েছে। এ অবস্থাকে সামাল দিতে সরকার এখন বিদেশে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের কম সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে। এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন করতে ইচ্ছুক। যাতে বিদেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের কম সুদে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানো বৃদ্ধি করা যেতে পারে।  
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসী আয় হঠাৎ করে কমে যায়। সম্প্রতি বছরগুলোতে প্রবাসী আয়ের যে ক্রমবৃদ্ধির ধারা ছিল তার ছেদ ঘটে। ২০১০-১১ অর্থবছরে আসে ৮২৯ বিলিয়ন    টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১,০১৮ বিলিয়ন টাকা; ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১,১৫৬ বিলিয়ন টাকা; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১,১০৫ বিলিয়ন টাকা; ২০১৪-১৫-তে ১,১৮৯ বিলিয়ন টাকা; ২০১৫-১৬-তে ১,১৬৮ বিলিয়ন টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ১,০১০ বিলিয়ন টাকায়। পরের বছর ২০১৭-১৮-তে বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী উদ্যোগ নেওয়ার ফলে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১,২৩১ বিলিয়ন ডলার টাকা।
এদিকে সম্প্রতি রপ্তানি বাড়লেও তার চেয়ে বেশি হারে দেশে আমদানি বেড়েছে। সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্প ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ফলে আমদানি বেড়ে যায়। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে টান পড়ে। চলতি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৩৬৯ বিলিয়ন ডলার। জুন মাস পর্যন্ত আমদানি ব্যয় পরিশোধ করার পর জুলাই মাসে সে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩২.৭৮ ডলারে। এ সময়ের পর থেকে প্রবাসী আয়ের যে ধারা অব্যাহত আছে তাকে বিপজ্জনক মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে রেমিটেন্স বৃদ্ধি না করা গেলে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও করছে। সরকার বৈদেশিক ঋণ দিয়ে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছে, এর বিপরীতে রেমিটেন্স ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে এই ঋণ পরিশোধ কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।     
এ বছর সরকারের প্রবাসী আয়ের নানাদিক বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখতে পায়, হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো, মধ্যপ্রাচ্যের রেমিটেন্স পাঠানো দেশগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি এবং ওইসব দেশে কর্মরত শ্রমিকদের আয়ের ওপর করারোপ করার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমা শুরু করেছে। এর মধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আসা বেশি ক্ষতি করছে। প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠালেও সে টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে যা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার বিদেশি শ্রমিকদের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এর কিছু সুফলও পায় সরকার।
তাই বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এসব চিন্তা থেকে তারা বিদেশি গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে যেতে চাওয়া শ্রমিকদের জন্য একটি তহবিল গঠন করতে চায়, তা থেকে পুনঃঅর্থায়ন হিসেবে অর্থ নিয়ে অভিজ্ঞ ও ইচ্ছুক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশমুখী শ্রমিকদের দেবে। প্রবাসী শ্রমিকরা পরে বিদেশে গিয়ে আয় করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেই টাকা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেবে। এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বিশেষায়িত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের পরামর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক করণীয় চূড়ান্ত করবে। প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেদের তহবিল থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের ঋণ দেয়। তবে সে ঋণের পরিসর, সুদহার ও শর্ত নিয়ে বিদেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের মাঝে প্রশ্ন আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত। খোলা কাগজকে তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা এখন আমাদের বড় এন্টারপ্রেনিয়র। তারা সমাজের একেবারে প্রান্তিক মানুষ। এসব মানুষ ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশে যায়। তাদের পাঠানো অর্থে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা যদি কম সুদ ও সহজ শর্তের ঋণ নিয়ে তাদের বলতে পারি, তোমাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেছে তাহলে তারা উপকৃত হবে। তারা দেশের জন্য যে কন্ট্রিবিউট করছে এ ধরনের উদ্যোগের ফলে তাদের জন্যও দেশের কিছু একটা করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ সফল হলেই সবার জন্য ভালো হবে।

 
Electronic Paper