ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শ্রমিকের ওপর বাড়তি চাপ

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২০

 

তৈরি পোশাকশিল্প করোনা অভিঘাত মোকাবিলা করে অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। ফিরেছে তৈরি পোশাকের কার্যাদেশও। করোনা আক্রান্ত ঊর্ধ্বমুখী সময়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছিল। কিন্তু এখন কার্যাদেশ বাড়লেও শ্রমিক বাড়ানো হচ্ছে না। শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, কম শ্রমিক দিয়ে আগের একই কাজ করানো হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা বলছেন, চাপ সৃষ্টি হওয়ার মতো কার্যাদেশ এখনো আসেনি। এতে শ্রমিকদের ওপর চাপও সৃষ্টি হচ্ছে না। করোনাকালে প্রায় প্রতিটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১১৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বিজিএমইএর মতে, বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা তিন শতাধিক। এর বাইরে আংশিকভাবে লে-অফ ও ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। এদিকে করোনা মহামারীর ভয়াবহতা কমে এলে তৈরি পোশাক কারখানার কার্যাদেশ স্বাভাবিক হতে থাকে। এ সময় কম শ্রমিক দিয়েই উৎপাদনের স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখেন মালিকরা; শ্রমিকদের ওপর বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র কুমার বলেন, সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে অহরহ খবর আসছে। ৮ ঘণ্টার পর বাড়তি সময় কাজ করতে না চাইলে শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।  

সাথী আক্তার এমন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। তিনি মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের একটি কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি খোলা কাগজকে জানান, তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হন। সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেন। বাসায় ফেরেন সাড়ে ১০টায়। বাসায়  জরুরি কাজ থাকলেও সাধারণ ডিউটি করে ফিরতে পারেন না। বাড়তি ডিউটি করতে না চাইলে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখানো হয়। আমরা আর পারছি না। তিনি বলেন, কখনো কখনো ওভারটাইমের টাকা ছাড়াই কাজ করানো হয়। আবার কখনো কখনো শিপমেন্টের কথা অতিরিক্ত কাজ করানো হয়। শরীরে আর কুলাচ্ছে না, আবার চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারছি না।

জিম্মি করে উৎপাদন বাড়ানো সঠিক পন্থা নয়। করোনা মহামারীর মধ্যে যে শ্রমিক উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে, সেই শ্রমিককে চাকরির ভয় দেখিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করাটা অন্যায় বলে মনে করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, এভাবে চাপ তৈরি করে উৎপাদন বাড়ানোর ফলে তৈরি পোশাক সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাবে। 

তিনি বলেন, কারখানা এলাকা থেকে অনেক শ্রমিক ফোন করে তাদের দুর্দশার কথা জানাচ্ছে। যে শ্রমিক করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সচল করেছে, সেই শ্রমিককে ভয় দেখিয়ে বেশি উৎপাদন করিয়ে নেওয়া এবং শ্রমিকরা উৎপাদন করতে না চাইলে ছাঁটাই করা হলে খারাপ বার্তা যাবে। করোনা মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখী সময়ে কারখানা খুলে দেওয়া হলে সব শ্রমিকই কাজে যোগ দেন। অনেক শ্রমিক আক্রান্তও হন, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। সে সময় তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা হয়। এর মধ্যেই শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। এ সময় কিছু কিছু কারখানা শ্রমিকের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এর মধ্যেই শ্রমিকরা উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি আয় ফেরানোর কাজ করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা এসব শ্রমিক সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত। শ্রমিককে ছাঁটাই করে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে উৎপাদন বাড়ানো আইনি ও মানবিকতাবিরোধী বলে মনে করেন গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, শ্রমিকের অধিকার ক্ষুন্ন না করে শ্রমিকের জীবনমান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে  উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।

বাড়তি চাপ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি এ এম চৌধুরী সেলিম। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, প্যানডেমিক সিসুয়েশনের কারণে ওয়ার্কফোর্স কমানোর কথা মনে করছেন, কস্ট কমানোর কথা চিন্তা করেছেন। হয়তো পরে আর নেননি। নতুন কার্যাদেশ বলতে যা বোঝায় তা নেই। যে প্রাইজে কার্যাদেশ আসছে, তা দিয়ে স্যালারি পেমেন্ট করা কঠিন। কোনোভাবেই বাড়তি চাপ দেওয়া হচ্ছে না। এমন হতে পারে কোনো কারখানা ৮ ঘণ্টা চলত, এখন হয়তো সে কারখানা ১০ ঘণ্টা চলছে। এটা শ্রম আইন মেনে ও শ্রমিকের সম্মতিতেই করা হচ্ছে।

 
Electronic Paper