ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পোশাককর্মীদের জন্য ডরমেটরি অধরা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২০

আটকে গেল কম সুদের ঋণ সহায়তা নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ডরমেটরি নির্মাণ। গার্মেন্ট মালিকদের অনীহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের জনবলের অভাব এবং নীতিমালায় সমস্যার কারণে ডরমেটরি নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে।

কারখানার সীমানার মধ্যেই শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করতে ২০১৪ সালে ডরমেটরি নির্মাণে ২ শতাংশ সুদে মালিকদের ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ তহবিল ও মালিকদের পক্ষে বিজিএমইএ-এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ তহবিল থেকে ২ শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে বিজিএমইএ-এর সদস্য উদ্যোক্তারা কারখানার সীমানার ভিতরে বা আশপাশে নির্মাণ করবেন শ্রমিকদের জন্য বাসভবন। এই ঋণের বিপরীতে যে জমিতে ডরমেটরি নির্মাণ করবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ তহবিলের কাছে বন্ধক হিসাবে দেবে। এবং দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধ করবে। এ ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যথাসময়ে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ১০০ জন উদ্যোক্তাও ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করেন। আবেদন করের ১৫ জন। প্রয়োজনীয় শর্ত পালন সাপেক্ষে যোগ্য বলে বিবেচিত হন মাত্র দুই জন উদ্যোক্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণে ২ শতাংশ সুদের ঋণ বিতরণের প্রাক কার্যক্রম শুরু করলেও নানা জটিলতায় আটকে যায়। প্রথমত, মালিকদের অনীহা। বিজিএমইএ-এর প্রায় চার হাজার সদস্য আছে। কিন্তু ডরমেটরি নির্মাণের জন্য আবেদন পড়ে ১৫টি। তারপর প্রয়োজনীয় শর্ত পালন করে যোগ্য বলে বিবেচিত হন মাত্র দুজন।

দ্বিতীয়ত, ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ণ তহবিল বিভাগকে কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হলেও এই ঋণ বিতরণের জন্য প্রকৌশলগত যে সামর্থ্য দরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই সংখ্যক প্রকৌশলী ছিল না। তৃতীয়ত, কারখানার মালিক পক্ষ জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিলেও সেই জমি প্রকল্প হিসাবে ‘গৃহায়ন তহবিল’ তা বন্ধক নিতে পারে না। আবার অনাদায়ে সেই জমি বিক্রির টাকাও উদ্ধার করতে পারে না বলে আইনজ্ঞরা পরামর্শ দেন। এবং চতুর্থত, ২ শতাংশের ঋণ বিতরণের জন্য নীতিমালায় ‘তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে ঋণ বিতরণ করা হবে’ বলে উল্লেখ থাকলেও ডরমেটরি নির্মাণে নতুন করে কোন অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৬০ কোটি টাকাই একমাত্র তহবিল যা ডরমেটরি নির্মাণে যথেষ্ট নয়। এ সব কারণে শ্রমিকদের ডরমেটরি নির্মাণে ঋণ বিতরণ করতে দুজন উদ্যোক্তাকে চুড়ান্ত করলেও শেষ পর্যন্ত আটকে যায়। স্থগিত করা হয় এই ২ শতাংশ সুদের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বিজিএমইএ-এর সভাপতি রুবাবা হক কথা বলতে চাননি। তিনি পিএস-এর মাধ্যমে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে বিজিএমইএ-এর পরিচালক মো. নাসির খোলা কাগজকে বলেন, এই ঋণ নিতে এত বেশি শর্ত ছিল যে আমরা ওই ঋণের ব্যবহার করতে পারিনি। শর্ত শিথিল করার চেষ্টা করার পর সম্ভব হয়নি। অথচ এই ঋণের আওতায় ডরমেটরি নির্মাণের অনেক উদ্যোক্তারই সম্মত ছিলেন। এই চেষ্টাকারীর দলে বিজিএমইএ- এর সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকও ছিলেন।

দীঘদিন ধরেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হচ্ছে শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণের। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি গার্মেন্টস শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে একদিকে নারী শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, প্রাপ্ত মজুরির বড় অংশ চলে যায় বাসা ভাড়ায়। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান না থাকার কারণে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যহানিতে ভোগেন। এর ফলে উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়ে। এ জন্য কারখানার পক্ষ থেকে ডরমেটরি নির্মাণ করা হোক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী খোলা কাগজকে বলেন, শ্রমিকদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা উদাসীন। তাই চাপে পড়ে শ্রমিকের পক্ষে কোন কথা বললেও বাস্তবে প্রতিফলন হয় না। শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণে উদ্যোগের কথা বললেও একই ভাবে আলোর মুখ দেখছে না। করোনার কারণে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের জন্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা জার্মান সরকার দিতে চেয়েছিল। একই অবহেলার কারণে ওই টাকা নিয়ে শ্রমিককে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ খাতের উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের নিয়োগ পত্র দেয়না। আবার যখন তখন চাকরিচ্যুত করে-এ সম্পর্কিত কোন ডকুমেন্ট রাখে না এবং আইনানুগ পাওনা পরিশোধ করে না। ডরমেটরি নির্মাণে এ ধরণের হীন মানসিকতা শ্রমিককে সর্বোচ্চ অবহেলার ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন এই প্রবীন শ্রমিক নেতা।

 
Electronic Paper