ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যুবকের তিন লাখ সদস্যের লোপাট অর্থের গতি হচ্ছে

জাফর আহমদ
🕐 ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০

যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি- যুবক-এর প্রায় সাড়ে তিন লাখ সদস্যের লোপাট হয়ে যাওয়া অর্থের গতি হতে যাচ্ছে। যুবকের সম্পদ অনুসন্ধান ও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কমিশন গঠনের প্রায় ১০ বছর পর অর্থমন্ত্রণালয় একজন প্রশাসক নিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুবকে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে। যুবক প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ টাকা ফেরত দিতে কমিশন গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে অর্থমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতে বলেন।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত হওয়ার কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠি পাঠানোর প্রায় দুই মাসে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি। তবে শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

এরপর সদস্যদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রতারণার মাধ্যমে সদস্যদের লোপাট হয়ে যাওয়া অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ নিরুপণে সরকার ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে কমিশন (প্রথম কমিশন) গঠন করে। ‘দ্য কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট-১৯৫৬’ অনুযায়ী গ্রাহকের টাকায় কেনা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিতে ওই সময় কমিশন যুবককে নোটিস দেয়।

নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে ৬৭৪ একর জমি রয়েছে উল্লেখ করে যুবক কর্তৃপক্ষ কমিশনের কাছে হিসাব দেয়। এরপর ২০১১ সালে সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে দ্বিতীয় কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন সে সময় প্রথমে পল্টনে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবনে ও পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে কার্যালয় স্থাপন করে কাজ শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মোবারক হোসেন সাচিবিক কার্যক্রম চালান। দ্বিতীয় কমিশনও সম্পত্তির হিসাব চায় যুবকের কাছে।

এ সময় যুবক কর্তৃপক্ষ ৫১৮ একর জমির একটি হিসাব কমিশনের কাছে দেয়। কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার মধ্য দিয়ে কাজ শেষ করে। ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনেও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপে বলা হয়, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০-এর আওতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধন পরিদফতরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান যুবক। ১৯৯৭ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত হলেও এর তিন বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সাল থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সারসংক্ষেপে বলা হয়, যুবকের সম্পত্তি সরকারের হেফাজতে গ্রহণ, ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিক্রি করে প্রকৃত গ্রাহকদের আসল পাওনা বুঝিয়ে দিতে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের মাধ্যমে একজন প্রশাসক বা রিসিভার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছিল।

এর বাইরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিশন ও কমিটি তাদের প্রতিবেদনে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওই সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে ২০১৬ সালের ২৪ জুন এ বিষয়ে একটি অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন।

যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের অর্থ ফেরত দিতে এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ও একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম অর্থমন্ত্রীর কাছে সার সংক্ষেপ পাঠান। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের পাওনা টাকা ফেরত পেতে অর্থমন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা ও সহযোগিতা চাওয়া হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, যুবকের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে গ্রহণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বিক্রি করে প্রকৃত গ্রাহকদের জমা করা মূল আমানত পরিশোধের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শক্রমে একজন রিসিভার বা প্রশাসক নির্বাচন করা যেতে পারে। সারসংক্ষেপে যুবকের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সদস্যদের বিনিয়োগের আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে যুবক কতৃপক্ষ। গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যুবক কর্তৃপক্ষ যে সম্পদের পাহাড় গড়েছে এর বর্তমান বাজার মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রশাসক নিয়োগ ও গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে নড়েচড়ে বসে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে করোনার সময়ে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম ও পেঁয়াজ ইস্যুতে কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকার কারণে এই কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। কবে নাগাদ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে তাও কেউ জানে না।

গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে কমিশন গঠনের দশ বছরে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশ প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা। রাজধানী ঢাকায় পুরানা পল্টনে যুবক ভবনের কাছে অবস্থানরত একজন এজেন্ট এই প্রতিবেদককে বলেন, সম্পদ থাকলেও এ সম্পদ প্রতারক উদ্যোক্তাদের লোকজন ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে। আরও কিছুদিন এভাবে চললে সম্পদ পুরোপুরি বেহাত হয়ে যাবে। তখন উদ্যোগ নিয়েও কোনো কাজ হবে না।

 
Electronic Paper