প্রণোদনা বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংক
জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৮, ২০২০
করোনার ক্ষত সেরে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য গবাদি পশুর খামার, পোলট্রি খামার, মৌসুমি ফল ও ফুল এবং মৎস্য চাষে ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে এ প্রণোদনা বিতরণ করে। এ ঋণ বিতরণ করার জন্য ৪৩টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করে। কিন্তু চার মাসে বিতরণ করেছে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতাসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো ঋণই বিতরণ করেনি।
কৃষি খাতে করোনা মোকাবিলা করার জন্য চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল ডেইরি ফার্ম, পোলট্রি ফার্ম, মৌসুমি ফল-ফুল ও মৎস্য খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করে। কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৪৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষর করে। শর্ত অনুযায়ী এ ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে ক্লেইম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিয়ে দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মধ্য এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে মাত্র ৪৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা থেকে ১৭ হাজার ৯৮০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতা ব্যাংক, আইএফআইসি, যমুনা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক কৃষকদের মধ্যে বিতরণই শুরু করেনি। যেসব ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ করেছে, তাদের মধ্যে এমনও আছে মাত্র ১০ লাখ টাকা বিতরণ করে চুক্তি রক্ষা করেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। এরপর থেকে দেশের উৎপাদন বিপণন, বিনিয়োগ, যোগাযোগ- সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে মানুষের রোজগার ও ভোগে। রোজগার না করতে পারার কারণে মানুষের চাহিদায় ভাটা পড়ে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারনির্ভর গড়ে ওঠা গবাদি পশু খামার, হাঁস-মুরগির খামার, তরমুজ-আম-পেয়ারার মতো মৌসুমি ফল, মাছ চাষে বিপর্যয় হানা দেয়। লোকশান গুনতে শুরু করে চাষি-উদ্যোক্তারা।
তরমুজ চাষি তরমুজ চাষ করে ফসলের দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হয়; মুরগি, মুরগির ডিম বিক্রি করতে না পেরে লোকশান গুনতে শুরু করে খামারি; একই অবস্থা হয় মৎস্য চাষির। গরুর দুধ বিক্রি করতে না পেয়ে রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ শুরু করেন খামারি। এ প্রতিকূলতা গড়ায় ঈদ পর্যন্ত। অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান ও ভোগে বিপর্যয় রোধে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। গ্রাহক পর্যায়ে যার সুদ ধরা হয় ৪ শতাংশ।
কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্লেইম করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ১০১ টাকা দেবে। আর গ্রাহকের কাছে থেকে সুদ হিসাবে নেবে ৪ শতাংশ। সরকারের টাকা বিতরণ করলেও ওই ব্যাংক অপারেটিং চার্জ হিসাবে পাঁচ শতাংশ সুদ পাবে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংক আগ্রহ দেখাচ্ছে না এতে। কোনো কোনো ব্যাংক বাধ্যবাধকতার কারণে বিতরণ করলেও তা নামমাত্র। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকসহ আরও চারটি ব্যাংক চার মাসে কোনো ঋণই বিতরণ করতে পারেনি।